প্রকাশ: সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১১:২০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পঞ্চগড়ে একটি হত্যা মামলায় আত্মসমর্পণ করা আসামিদের জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিচারককে লক্ষ্য করে বাদী জুতা নিক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মামলার বাদী মিনারা আক্তারকে (২৫) সঙ্গে সঙ্গে আটক করে আদালত-পুলিশ। পরে তাঁর বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় তিনি জামিনে মুক্ত হন। মিনারা আক্তার পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল-হটরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
আদালত-পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ ডিসেম্বর সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার ইয়াকুব আলী (৮৩) নামের এক ব্যক্তি স্বজনদের সঙ্গে জমি নিয়ে মারামারির সময় মারা যান। এ ঘটনায় ওই দিনই ইয়াকুব আলীর মেয়ে মিনারা আক্তার ১৯ জনকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সোমবার সকালে ওই মামলার ১৬ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এ সময় বাদী মিনারা আক্তার আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালত ১৬ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় বাদী মিনারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন ও চিৎকার করে গালিগালাজ শুরু করেন।
একপর্যায়ে কাঠগড়া (বাদীর দাঁড়ানোর নির্ধারিত স্থান) থেকে নামার সময় নিজের জুতা খুলে বিচারকের উদ্দেশে ছুড়ে মারেন মিনারা আক্তার। ছুড়ে মারা জুতা আদালতের এজলাসে সামনের সারিতে বসা আইনজীবীদের টেবিলের সামনে গিয়ে পড়ে। এতে হট্টগোল শুরু হয়। এজলাস থেকে নেমে বিচারক তাঁর খাসকামরায় চলে যান। এ সময় কিছুসংখ্যক আইনজীবীও এজলাস থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আদালতের আদেশে পুলিশ মামলার বাদী মিনারা আক্তারকে তাঁদের হেফাজতে নেয়। এরপর স্বল্প সময়ের জন্য বিচারকাজ বন্ধ থাকার পর আবার আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলার শুনানির সময় এজলাসে উপস্থিত থাকা আইনজীবী মো. ইউনুস আলী বলেন, তিনি এই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় একটি হত্যা মামলায় জামিন শুনানি হয়েছিল। সেখানে বাদীপক্ষ আসামিদের হাজতে নেওয়ার আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালত আসামিদের জামিন দিয়েছেন। এই জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাদী বিচারককে লক্ষ্য করে স্যান্ডেল (জুতা) ছুড়ে মারেন।
ইউনুস আলী আরও বলেন, আসামিকে জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে। সেই দৃষ্টিকোণে যদি বিচারপ্রার্থী মানুষ সংক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে উচ্চ আদালত আছেন। কিন্তু এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ কোনো বিচারপ্রার্থীর আছে বলে তিনি মনে করেন না।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, মামলার ১ থেকে ৩ নম্বর আসামি আত্মসমর্পণ করেননি। অপর ১৬ জন আসামি আত্মসমর্পণ করেছেন। আসামিপক্ষের বক্তব্য ছিল, যিনি মারা গেছেন, তিনি মারামারিতে নয়, অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এমতাবস্থায় আদালত আসামিদের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে ৮ থেকে ৯ জন মহিলা ছিলেন। জামিন দেওয়ার পরপরই বাদী মিনারা আক্তার উত্তেজিত হয়েছেন। এ সময় বাদীর পরনে যে জুতা ছিল, তা তিনি বিচারককে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছেন। এটি ধৃষ্টতামূলক আচরণ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম বলেন, যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তাঁর বাড়িতে গতকাল কুলখানি চলছিল। সেই সুযোগ নিয়ে আসামিরা আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। খবর পেয়ে দেরিতে হলেও বাদী আদালতে ছুটে আসেন। শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করা হলে আদালত সুরতহাল প্রতিবেদন চান। এ সময় সুরতহাল প্রতিবেদন সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে জুতা নিক্ষেপের ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মিনারাকে কী কারণে আটক করা হয়েছিল, তা–ও তিনি জানেন না।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দিকে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন বলেন, আদালতের একজন অফিস সহায়ক বাদী হয়ে মিনারা আক্তারের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করেন। মামলায় আদালত অবমাননা এবং আদালতের ভেতর হট্টগোল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে ওই আদালতই মিনারা আক্তারকে এক আইনজীবীর মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে জামিন দিয়েছেন।
পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বলেন, ঘটনার পর সন্ধ্যায় আমরা আইনজীবী সমিতির নেতারা বিচারকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি এবং পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। এরপর আদালত আটক ওই নারীকে তাঁদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী ছেড়ে দিয়েছেন।