শুধু সাম্প্রতিক নয়; কোনো নির্বাচনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে এতটা নমনীয় হয়নি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিশ্বব্যাপী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখানোর প্রচেষ্টায় এবার সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছে দলটি। এমনকি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে তাদের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় পুরষ্কার। মিলতে পারে মন্ত্রিত্বও। তবে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে হবে, এই শর্তেই মিলবে পুরষ্কার। আওয়ামী লীগের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি টিম এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। যোগ্যতাসম্পন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এমনকি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে সাক্ষাত দিয়েছেন। তাদের আশ্বস্ত করেছেন, কোনো প্রশাসনিক চাপ বা নির্বাচনে কোনো ধরণের কারচুপি হবে না। এবারের নির্বাচনে জনপ্রিয়রাই নির্বাচিত হবে। তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র ভোরের পাতাকে আরো নিশ্চিত করেছে, একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর আসনেও জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নিরুপণ হবে এবারের নির্বাচনে। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতে আসলে তাদেরকে পুরষ্কৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
ভোরের পাতার অনুসন্ধান ও কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ৪৭ টি আসনে নৌকার প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলেই তাদের অনেককে খুব ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হবে। মস্ত্রিসভা থেকে শুরু করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নীলফামারীতে ১ জন, রংপুরে ১ জন, কুড়িগ্রামে ২ জন, গাইবান্ধাতে ১ জন, বগুড়াতে ৩ জন, নওগাঁতে ২ জন, রাজশাহীতে ১ জন, নাটোরে ২ জন, কুষ্টিয়াতে ১ জন, ঝিনাইদহে ১ জন, যশোরে ২ জন, খুলনায় ২ জন, সাতক্ষীরাতে ১ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, বরিশালে ২ জন, পিরোজপুরে ১ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন, ময়মনসিংহে ২ জন, নেত্রকোনায় ২ জন, কিশোরগঞ্জে ১ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন, ঢাকায় ১ জন, গাজীপুরে ১ জন, নরসিংদীতে ২ জন, নারায়ণগঞ্জে ১ জন, ফরিদপুরে ২ জন, সুনামগঞ্জে ১ জন , সিলেটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ জন, কুমিল্লাতে ২ জন, লক্ষীপুরে ১ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, কক্সবাজারে ১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর অবস্থান নৌকার মনোনয়ন প্রাপ্তদের চেয়ে ভালো। সুষ্ঠু ভোট হলে তারা জিততে পারেন বলে মাঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থা থেকে। ফলে এই ৪৮ টি আসন নিজেদের দখলে রাখতে এবং সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হবে বলেই মনে করে আওয়ামী লীগ। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তী কোনো বিষয়ে তারা যেন অন্য দলে যোগ দিতে না পারেন, সেক্ষেত্রে মৌখিক কথাবার্তাও সেরে রাখছেন অনেকের সঙ্গেই।
তবে, বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। তাই এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, আমাদের নেত্রী যেভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুযোগ দিয়েছেন, সেটা নিয়ে কথা বলার আর সুযোগ নেই। জনপ্রিয়তা যাচাই করে কেউ নির্বাচিত হয়ে আসলে আমরা স্বাগত জানাবো। আওয়ামী লীগ বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই এ দল থেকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই তো স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন অনেকে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করা।