ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে থানায় আগত সেবা প্রার্থীদের দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদান করতে হবে। মানুষ পুলিশের সেবা পেতে প্রথমে থানায় আসে। আমরা থানাকে মানুষের সেবা প্রাপ্তির প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জনসেবায় কতটা আন্তরিক তা দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত নগরবাসীকে বুঝাতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাষ্ট্র আমাদেরকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছে। পেশাদারিত্ব ও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিয়ে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে। পুলিশী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরো বেগবান করতে হবে।
তিনি বলেন, ডিএমপির প্রত্যেক সদস্যকে শতভাগ ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হবে। জনসাধারণের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করতে হবে। মহানগরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের দিন-রাত পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক সময় ধৈর্যচ্যুতি হতে পারে, তারপরও ধৈর্য ধরে জনগণের সেবা দিয়ে যেতে হবে। কেউ অপরাধ করলে তার ব্যক্তিগত দায় ডিএমপি নেবে না। আমরা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না। পেশাদারিত্বের সাথে ভালো ব্যবহার করে অন্যের খারাপ ব্যবহারের জবাব দেবো।
কমিশনার আরো বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের অফিসারদের সাথে কথা বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিকের সিনিয়র অফিসারদের রাস্তায় থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, চুরি মামলা, ছিনতাই মামলা, মামলা তদন্ত, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও মূলতবি মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়াও মাদক আসক্ত ব্যক্তি ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
উপস্থিত অফিসারদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, আমরা সবাই মিলে একে অপরকে সহযোগিতা করে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবো। এ ব্যাপারে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। যেকোন প্রয়োজনে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো।
মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে জানানো হয়েছে, এক বছর আগে দায়ের হওয়া অপমৃত্যুর মামলাগুলোর মধ্যে গত তিন মাসে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১২টি ও চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে (মুলতবি) এমন মামলা ১১৯টি। এছাড়া, দুই বছরের বেশি আগের অরাজনৈতিক মামলায় নিষ্পত্তি ১টি, মুলতবি মামলা ১৭টি।
ক্রাইম কনফারেন্স সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে জারি করা ওয়ারেন্ট তামিল করতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যেকোনও ধরনের ওয়ারেন্ট তামিলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তথ্যগত কিংবা ওয়ারেন্ট তামিল করতে কোনও ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে প্রয়োজনে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ডিএমপির মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে তথ্য তুলে ধরা জানানো হয়, ওয়ারেন্ট তামিলের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা পুলিশের এবং থানা পুলিশের সহায়তায় অগ্রগতি আগস্ট মাসে ১৪.১৮ ভাগ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩.২৬ ভাগ ও অক্টোবর মাসে ১১.৭৫ ভাগ।
কনফারেন্সে আরও জানানো হয়, চোরাই গাড়ি উদ্ধার ও প্রতিরোধে থানায় মামলা দায়ের হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ পরিদর্শককে (তদন্ত) সেসব মামলার এজাহারের কপি সংশ্লিষ্ট বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বিভাগের চোরাই গাড়ি উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনারের (এসি) কাছে হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য পাঠাতে হবে। সেসব মামলা তদন্ত করবে গোয়েন্দা পুলিশ।
এছাড়া, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর থেকে গঠিত টাস্কফোর্স চলমান ও সক্রিয় রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাদক মামলার নীতিমালা তৈরির অগ্রগতির বিষয়টিও ক্রাইম কনফারেন্সে তুলে ধরা হয়।
গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, চুরি মামলা, ছিনতাই মামলা, মামলা তদন্ত, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও মুলতবি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে কনফারেন্সে নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এছাড়াও মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।