সাতক্ষীরাকে এক সময় বলা হতো মিনি পাকিস্তান। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত জেলাতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলার পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৪ টি সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন ৪৪ জন। তবে চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন ৮ জন। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা।
সূত্র মতে, সাতক্ষীরা-৪ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা না থাকায় বাকি ৩ টি আসনের মধ্যে প্রতি আসনে ২ থেকে ৩ জনের নাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে আলোচনা করে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন ৪৪ জন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন ১৪ জন, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে ১১ জন, সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি-কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে ৮ জন এবং সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে রয়েছেন ১১ জন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সাতক্ষীরা ১ আসনটি এখন মহাজোটের শরিকদল ওয়াকার্স পার্টিকে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আবারও আসনটি ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে , ওই আসনে নৌকার মনোনয়ন তুলেছেন যে ১৪ জন তাদের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনায় থাকতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমারও এগিয়ে রয়েছেন মনোনয়ন দৌঁড়ে। অন্যান্যদের মধ্যে মনোনয়ন তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সাহিদ উদ্দিন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম লালটু ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, ঢাবির জসিম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির টুটুল ও কৃষক লীগ নেতা আফজাল হোসেন।
সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. কাজী এরতেজা হাসান, সিআইপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলামের নাম চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। এছাড়া অন্যান্য যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু, যুগ্ম-সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জিএম ফাত্তাহ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্না, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এসএম শওকত হোসেন ও সাবেক সচিব জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ শাফী আহম্মেদ।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক। তিনি ছাড়া মনোনয়ন দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে আছেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম। এছাড়া মনোনয়ন কিনেছেন নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহম্মেদ স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা আফসার আলী, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. গোলাম মোস্তফা ও ছাত্রলীগ নেতা খালিদ হাসান নয়ন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে ১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জগলুল হায়দার ইতিমধ্যেই সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে নৌকার মনোনয়ন দৌঁড়ে অন্য যারা ফরম তুলেছেন তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন। তিনি ছাড়া আরো যারা নৌকার মনোনয়ন কিনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাকসুদা খানম মেধা, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আজম লেলিন, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা বাবলুর রহমান, তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শফিউল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টু, রনি আহমেদ ও আনিছুর রহমান আনিছ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। শনিবার এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এই সভা করার কথা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।