শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বরগুনা-০১ আসন
পুরো পরিবার বিএনপি-জামায়াতপন্থী, গোলাম সারোয়ার চান নৌকার মনোনয়ন!
উৎপল দাস
প্রকাশ: সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ৬:০২ পিএম আপডেট: ২০.১১.২০২৩ ৬:২৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দলে অনুপ্রবেশের লাইন দীর্ঘতর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদও বাগিয়ে নিয়েছেন গোলাম সারোয়ার টুকু। যদিও তার পুরো পরিবারের লোকজনই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এমন একজন হাইব্রিড নেতাকে নৌকার মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা নেই বলেই চলে এমনটাই মনে করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ (সম্পাদক) বলেন,  ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে প্রবেশের লাইন ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো এর বাইরে থাকেনি। ফলে বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্যরাও সহযোগী সংগঠনে পদ পদবি বাগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে চোখের পলকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য হয়ে যাচ্ছেন। সহযোগী সংগঠন পাড়ি দিয়ে পরবর্তীতে মূল দলেও বাগিয়ে নিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি। যা সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের আদর্শ এবং নীতির পরিপন্থী।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগে এমন অনুপ্রবেশকারী একজন নেতা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক সত্তার উন্মেষ ঘটালেও মননে মগজে এখনো তিনি আওয়ামী আদর্শকে ধারণ করেন না বলেই মনে করেন জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা।

অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গোলাম সারোয়ার টুকুর বাবা আব্দুল ছোবাহান ডিলার ছিলেন জেলা জামায়াতের সদস্য। তিনি বরগুনা জেলার ইসলামী ঐক্য জোটের নেতা মাওলানা আব্দুল রশিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং সত্তুরের নির্বাচনসহ প্রতিটি জাতীয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচনে আওয়ামী প্রাথীর বিপক্ষে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। আব্দুল রশিদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকবার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন। এমনকি, তিনি জিয়াউর রহমানের আমলে গম চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।  তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে মাওলানা আব্দুল রশিদের পক্ষালম্বন করে নৌকার বিরোধিতা করতেন।  ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত  প্রার্থী সাবেক  এম পি মরহুম সিদ্দিকুর রহমানের নৌকা মার্কার বিরোধীতা করেন টুকুর গোটা পরিবার

এছাড়া, গোলাম সারোয়ার টুকুর আপন বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া টিপু জাতীয় পার্টির রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে বিএনপির মনোনয়নে তিন বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেছিলেন। তার প্রতিটি নির্বাচনে টুকু নিজে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং প্রত্যেকটি জনসভায় উপস্থিত থেকে বিএনপির প্রার্থী তার ভাইয়ের জন্য ভোট প্রার্থনা করতেন। কিন্তু জনগণ তার ভাইকে ভোট দিয়ে একবারও নির্বাচিত করেনি, কারণ তার বিরুদ্ধেও নানা রকমের অপর্কমের অভিযোগ রয়েছে।

টুকুর আপন বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া টিপু জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এরশাদ সাহেবের বিরোধ হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত তখন গোলাম কিবরিয়া টিপু মঞ্জু গ্রুপের সভাপতি ছিল বরগুনা জেলা জাতীয় পার্টির। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসেন তখন জাতীয় পার্টি পরিবর্তন করে বরগুনা জেলা বিএনপিতে যোগদান করে জেলা বিএনপি'র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন গোলাম কিবরিয়া টিপু।

টুকুর আপন চাচা মানিক ৬ নং বুড়ির চর এলাকার বিএনপির নেতা। তার  নিজের শ্বশুর আনোয়ার ১৯৭১ সালের শান্তি কমিটির সদস্য তার বাড়ি ৭ নং ঢলুয়ার নলি গ্রামে। তার আরেক আপন ছোটো ভাই মোস্তফা কামাল হিমু বরগুনা পৌর ছাত্রদলের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  আপন ছোটো বোন পারভিন বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ছাত্রী বিষয় সম্পাদক ছিলেন। তার এক মামাতো ভাই টোকন আমতলী থানা ছাত্রদলের সভাপতি। আপন বোনজামাই মাহামুদুর রহমান সুজন মোকামিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনরত। তিনি বর্তমানে বরগুনা জেলা বিএনপি এর সদস্য।
গোলাম সারোয়ারের আপন খালাতো ভাই মহসিন আমতলি চাওরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমতলী উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি। 

শুধু যে গোলাম সরোয়ার টুকুর পরিবার বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত তাই নয়, তার শ্বশুরও প্রত্যক্ষভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি এইসময়ে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। 

তাছাড়া তার আপন বড় ভায়রা মাওলানা আশরাফ আলী পটুয়াখালী জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।  টুকুর আপন কোন জামাই বেতাগির মোকামিয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সুজন বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক। তার এক ফুফাতো ভাই আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বিএনপির মনোনয়নে বর্তমানে বরগুনা উপজেলার ৭ নং ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপন মামাতো ভাই মশিউর রহমান ওরফে কর্নেল আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য। আর এক মামাতো ভাই খোকনও বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। তার ভায়রা ভাই পটুয়াখালী জেলা জামায়েতে ইসলামীর আমির। তার আপন খালু মজিদ মল্লিক ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে আমতলী-তালতলী থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। 

গোলাম সরোয়ার টুকু সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে, টুকু কোনো দিনও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে, সে তার ভোটটি কখনো আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীকে দিয়েছে।

তাছাড়া বরগুনায় আরো গুঞ্জন আছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা -১ আসনের গোলাম সারোয়ার টুকু হচ্ছেন প্রথম আলো পত্রিকার মালিক মতিউর রহমানের প্রার্থী। ১/১১ সময় বরগুনা জেলা প্রথম আলোর প্রতিনিধি জসিমের নেতৃত্বে গোলাম সরোয়ার টুকু সহ ১৯ জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য বরগুনায় কাজ করেছিলেন।

শহরের বেশ কয়েকটি ভিটে দখল করেছেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্য জমিসহ কবরস্থান দখল করেছেন ডা. মলিজার। দৃশ্যত তার কোন পেশা নাই। তবুও তিনি বেশ আয়েশি জীবনযাপন করেন তার আয়ের উৎস কেউ জানেনা। তবে লোকমুখে জানা যায় সে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকেন এছাড়াও দালালীই তার মূল পেশা। 

গলাম সরোয়ার টুকু তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্নে বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভিপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার মাধ্যমে আওয়ামী বিরোধিতা শুরু করেন। পরবর্তীতে ভিপি নির্বাচিত হয়েই তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে একের পর এক বিরোধে জড়াতে থাকেন।

গোলাম সরোয়ার টুকু ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনে জিতে আসতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ওইসময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ চুরি করে বিদ্রোহী প্রার্থিকে দিয়েছিলেন৷ যা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দৃষ্টিগোচর হলে তিনি টুকুর উপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। 

সুযোগসন্ধানী এই নেতা একাধিক বার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ছলে বলে কৌশলে সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নিতে বিভিন্ন কূটকৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছিলেন যা আবারও দৃশ্যমান হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন্দ্র থেকে তাকে বহুবার কারণ দর্শানো নোটিস দেয়া হয়েছিল। 

এসব বিষয়ে জানতে গোলাম সারোয়ার টুকুকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]