নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই আহ্বান ও দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, যদি ওই ধরনের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষে তাদের ভোট দেওয়া সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের ঘোষিত ইশতেহারে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা ও সমঅধিকার-সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য চুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে অঙ্গীকার করবেন।
দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে এ জন্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ৮ দফা প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- (১) নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত করার লক্ষ্যে ইসিকে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ ভূমিকা পালন; (২) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হয় এবং নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ পায় এ জন্য ইসিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে; (৩) নির্বাচনী প্রচারে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ। যদি কোনো প্রার্থী, কোনো দল বা জোট নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে অনতিবিলম্বে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা; (৪) নির্বাচনের পূর্বাপর সময়কালে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির নিয়মিত টহলদানের ব্যবস্থা করা এবং নিয়মিত পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা; (৫) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সবাইকে সম্যকভাবে অবহিত করা এবং রেডিও, টেলিভিশনে তা জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রচার করা; (৬) সব ধর্মীয় উপাসনালয় যথা- মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা নির্বাচনী প্রচারকাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; (৭) ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি, মিথ্যা গুজব প্রচার বা এ ধরনের যাবতীয় প্রচার বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় ক্ষতিকর কার্য হিসেবে অপরাধ গণ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং একই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের প্রার্থিতা বাতিলের ব্যবস্থা করা; (৮) নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিজিবি, র্যাবের টহলদানের ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য- রঞ্জন কর্মকার ও ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শ্রী হীরেন্দ্রনাথ সমাজদার হীরু, রবীন্দ্রনাথ বসু, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ সাধু, চিত্তরঞ্জন সাহা, সুধাংশু কুমার গাইন ও অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।