ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শতাধিক পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৩০ টি পোশাক কারখানা নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। আরো কারখানা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, বেরণ ও নরসিংহপুর এলাকায় গিয়ে কারখানাগুলোর সামনে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে। এ সময় অনেক কারখানার ফটকের সামনে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিতে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নোটিশে বলা হয়, ৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় এবং বিগত কয়েকদিন ধরে বেলা ১১টা ও বিকেল ৩টার সময় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বহিরাগত পোশাক শ্রমিকদের বেআইনিভাবে কারখানার ভেতর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা ভাঙচুর ও কারখানার কাজ বন্ধ রাখাসহ কর্মস্থলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় কারখানার উৎপাদন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করল।
জামগড়া এলাকার দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, পাইয়োনওয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, বেরণ এলাকার এনভয় গ্রুপের মানটা এ্যাপারেলস লিমিটেড, স্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড, শারমিন গ্রুপের এ.এম ডিজাইন, হলিউড গার্মেন্টস লিমিটেড, নরসিংহপুর এলাকার হামিম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকার টেক্সটাউন টিমিটেড ও অরনেট নীট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স ও আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ অধিকাংশ কারখানায় বন্ধের নোটিশ টানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বেরণ এলাকার এএম ডিজাইন কারখানার শ্রমিক আয়েশা আক্তার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কারখানায় এসে কাজ যোগ দেয়ার পরপরই ছুটি দেয়া হয়। এরপর শ্রমিকরা সবাই বাসায় ফিরে যায়। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ গেছে। আজ সকালে কারখানার সামনে এসে অনির্দিষ্টকালের ছুটির নোটিশ দেখতে পাই। মালিকপক্ষ কী কারণে বন্ধ দিল আমাদের কিছুই জানানো হয় নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা গুলি খেয়ে মারা গেল। তার কোনো বিচার নাই। এখন আবার কারখানা বন্ধ করে দেয়া হলো। তাহলে আমরা শ্রমিকরা কোথায় যাব?’
হলিউড গার্মেন্টসের আঁখি আক্তার নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘কারখানা কবে খুলবে মালিকপক্ষ সেটা জানায়নি। এখন তারা যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নিক। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা যাই বেতন বাড়িয়ে কারখানা খুলে দিলে আমরা কাজে যোগ দেব। আমরা তো কাজ করতে চাই। কারণ হেলপারের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু অপারেটরদের তো কোনো ডিসিশন দিচ্ছে না। এজন্য আমরা কাজ করিনি।’
শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় ১ হাজার ৭৯২টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে যেসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া বাকি কারখানায় উৎপাদন চলছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো ধরনের সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো আছে। শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে বেশিরভাগ কারখানায়। তবে ১৩০টি পোশাক কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। বাকি কারখানাগুলোতে কাজ চলছে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং অব্যাহত থাকবে।
কারখানা বন্ধের বিষয়ে বক্তব্য নিতে বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।