কুষ্টিয়া জেলায় স্থাপিত ৪টি মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওজোপাডিকো ও পিডিবি। প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া বিল জমে গেলেও তা পরিশোধের দায়িত্ব নিচ্ছে না মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এই বিল পরিশোধের জন্য তাদের বেশ কয়েক দফা চিঠি দেয় ওজোপাডিকো ও পিডিবি কর্তৃপক্ষ। এতে কোনো লাভ হয়নি। দিনে দিনে বিলের অংক ভারি হচ্ছে, চাপে পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ অবস্থায় বিল আদায় নিয়ে কোন পথে এগোবে, সেটিও ভেবে পাচ্ছে না কেউ। বকেয়া বিল আদায়ে জেলার উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার উত্থাপিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৩ নম্বর পৌর ওয়ার্ড কুঠিপাড়া এলাকায় স্থাপিত মডেল মসজিদে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। প্রতি মাসে গড়ে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকার হিসেবে সর্বশেষ মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮ টাকা। ভেড়ামারা মডেল মসজিদেও এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিল বকেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়া ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি জানান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মডেল মসজিদের বকেয়া বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে মসজিদ কমিটিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এ বিল পরিশোধের দায় নিচ্ছে না কেউ। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মসজিদ ধর্মীয় স্থাপনা হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনাটি একটা স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। সেজন্য সংযোগও আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারছি না। অন্যদিকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়েও সরকারিভাবে আমাদের ওপর চাপ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ উভয় সংকটে পড়েছে।
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসএম নাসির উদ্দীন জানান, এ বছরের শুরুতেই মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার মডেল মসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ। মিরপুর মডেল মসজিদ প্রথমদিকে তিন মাসের বিল পরিশোধ করলেও এ বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, দৌলতপুর মডেল মসজিদের শুরু থেকে এখন কোনো বিল পরিশোধ না করায় সেখানে বিল বকেয়া হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৭১১ টাকা। প্রতি মাসে গড়ে প্রতিটি মসজিদে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ইউনিট। সে হিসেবে প্রতি মাসে বিল আসছে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। বকেয়া এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা ও মৌখিকভাবে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. হেলাল উজ জামান বলেন, দেশের সব মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টারগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। কুষ্টিয়া সদরসহ অপর ৫টি উপজেলায় স্থাপিত মডেল মসজিদগুলোও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায়। খোকসা ও কুমারখালী মডেল মসজিদ চালু হয়নি। বাকি চারটি উপজেলার সবগুলো মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বারবার বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে চিঠি দিচ্ছে। আমরাও বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখছি। মন্ত্রণালয় এ খাতে টাকা বরাদ্দ দিলেই আমরা বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারব।
তিনি আরও জানান, মডেল মসজিদগুলোর প্রতিটিতে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল সরকার পরিশোধ করবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটা পরিপত্র জারি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব মডেল মসজিদগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি। কুষ্টিয়া মডেল মসজিদে প্রতিটায় ৮ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি এসি লাগানো আছে। এক্ষেত্রে মসজিদ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি সজাগ হওয়া জরুরি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বিদ্যুৎ বিভাগও এক সময় বাধ্য হবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে।
কুষ্টিয়া সদর মডেল মসজিদের সভাপতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, এসব মসজিদগুলোর মেইন্টেনেন্সের দায়িত্বে মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ওনারাই ভালো বলতে পারবেন কিভাবে আর্থিক সংস্থান হচ্ছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে শুনেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেটা জেনে বলতে পারব। সূত্র: ঢাকা পোস্ট