চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে হাতির আক্রমনে শিশুসহ দুইজেনর মৃত্যু হয়েছে। সকালে মারা যান শিশু মুফাস্সির (১২) নামে এক শিশু আর বিকেলে নাচোল সীমান্ত পেরিয়ে তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা এলাকা মারা যান রামপদ নামে এক আদিবাসী যুবক। নিহত শিশু নেজামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বুলবুল হোসেনের ছেলে। ও রামপদ তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা এলাকার ললিতের ছেলে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নেজামপুর ইউনিয়নের মানিকছড়া গ্রামে মোশাররফের আম বাগানে ও বিকেলে মুন্ডুমালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মিন্টু রহমান।
ওসি বলেন,সকালে মানিকড়া গ্রামে দুটি পাগলা হাতির আক্রমণে গরুতর আহত হলে শিশু মুফাস্সির কে উদ্ধার করে নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধী অবস্থায় দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। অপর দিকে বিকেলে হাতিটি মুন্ডুমালা ধামধুম এলাকায় রামপদ নামে আরেক ব্যক্তিকে হত্যা করে। এর পর থেকেই এলাকাজুড়ে সাধারন মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে খবর পেয়ে নাচোল থানা পুলিশ,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও),ফায়ারসার্ভিস ও রাজশাহী বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এছাড়া চারজন হাতির মাহুত কে আটক করা হয়েছে। তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সাইফুল আলম বলেন,গত দুদিন ধরে দুটি হাতি নাচোল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল।মঙ্গলবার শ্রমিক বোঝায় একটি ইজিবাইকে চাঁদাবাজি করার সময় শ্রমিকরা বাধা দিলে ইজিবাইকটি সড়কের উপর উল্টে দেয়। এসময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়। এনিয়ে হাতির মাহুত ও শ্রমিকদের মাঝে বাগবিতন্ডা হয়।এরপর থেকেই একটি হাতি ছুটে দিকবিদিক ছোটাছুটি করে। সারারাত মাঠের ধান ও বেশ কিছু আম গাছ নষ্ট করে।
প্রত্যাক্ষদর্শী মুনজেলা নামে এক নারী বলেন, সকালে একটি হাতি বাঁধা ছিল অপর একিট দৌড়াদৌড়ি করছিল।এসময় বেশ কয়েকজন লোক হাতিটি দেখতে যায়। তখনই একটি হাতি মানুষের দিকে তেড়ে আসে। সে সময় হাতির আক্রমনে মুফাস্সির মারা যান।
আজিজুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন,সকাল থেকে হাতিটি পাকা ধানের মধ্যে ঢুকে প্রচুর পরিমানে ধান নষ্ট করেছে। এসব ধান আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কাটা হত। এমন হাতির তান্ডব চলতে থাকলে মাঠের সমস্ত পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) তোজাম্মেল হক বলেন,চাঁদাবাজি করা হাতিটি ছুটে গিয়ে মাঠে ও গ্রামে তান্ডব চালাচ্ছে।এক শিশু মারা যাবার পর এলাকার সাধারন মানুষ আতঙ্কে দিনপার করছে। দ্রুত হাতিটি ধরা না পড়লে হয়তোবা বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপণা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বণ্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন,হাতিটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তবে হাতির মালিক কে খবর দেয়া হয়েছে।নওগাঁ থেকে আসলে ঊর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যত দেরি হবে ততক্ষণ আতঙ্ক রয়েছে।
নাচোল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাবু বলেন,হাতির তান্ডবে একটি শিশুর প্রান গেছে। সে শিশুর পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্থ্য আমন ধান চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহবান জানান।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মোহাইমেনা শারমীন বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত যেন হাতিটি আটক করা যায়,সে বিষয়ে প্রাণী সম্পদ দপ্তর রাজশাহীতে খবর দেয়া হয়েছে। সকলের চেষ্টায় দ্রুত হাতিটি আটকের চেষ্টা চলছে। যতক্ষণ না আটক হবে,ততক্ষণ সাধারন মানুষ কে নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা হয়েছে।