গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া সবই গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি যাকে কেন্দ্র করে টিকে আছে গ্রামীণ জীবন। অনেকে আবার শুধু ছাগল বা ভেড়াকে গরিবের গাভি বলে থাকে। আর এই পশুগুলোর উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে গ্রামের মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। তাইতো কৃষি কাজের পাশাপাশি পশু পালনেই ঝুঁকছে মধ্যবিত্তরা। কেউ ব্যাংক থেকে কেউ আবার বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দুই-চারটি গরু বা ছাগল ক্রয় করে শুরু করছেন পশু পালনের কাজ। বাড়ির আঙিনায় ঘর তৈরি করেই গড়ছেন ছোট-বড় খামার।
পাশাপাশি নিকটবর্তী জমিতে শুরু করছেন ঘাস রোপনের কাজ। ফলে বাজারছাত গোখাদ্যের মূল বৃদ্ধি পেলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি খামারীগুলোর উপর। এছাড়াও গরু বা ছাগলের ঘাস এখন স্বল্প মুলে পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। গ্রামীন অর্থনীতির এই স্তম্ভের উপর নির্ভর করেই চলেছে শত শত পরিবার। এর উপর নির্ভর করেই অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক খামারের পশুবিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেদেরকে প্রবাসে পাঠাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে দেওয়া এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় শালিখা উপজেলায় বর্তমানে গাভীর খামার রয়েছে ৮৮৯ টি, মোটাতাজাকরণ খামার- ২৮৬টি, ছাগলের খামার- ১৯৭ টি, ভেড়ার খামার- ১৫টি, মুরগির খামার- ১৪১ টিসহ মোট খামারের সংখ্যা ১৫ শত ২৮ টি । যেখান গত চার বছর পূর্বে মোট খামারের সংখ্যা ছিল ৭৬৭ টি ।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪ পাঁচ বছর পূর্বে শালিখায় যতগুলো খামার ছিল বর্তমানে তা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও শালিখা উপজেলার উজগ্রাম, চৈতে, বড় থৈপাড়া, ছোট থৈপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ভেড়া পালানোর জন্য ভেড়ার গ্রাম নামে পরিচিত।
ভেঽড়া পালনে স্বাবলম্বী বড় থৈপাড়া গ্রামের রত্না বিশ্বাস তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে আমার খামারে দশটা ভেড়া আছে যার উপর নির্ভর করেই পরিবারের ভরণপোষণসহ নানাবিধ খরচ চলে। শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের খামারি উবায়দুল মোল্লা বলেন, আমার খামারে ছয়টি গরু আছে, আমি প্রতি ছয় মাস পরপর দুটি করে গরু বিক্রি করে দিই তা থেকে যে অর্থ পাই তাই দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে চাষ করি।
একই ইউনিয়নের দীঘি গ্রামের রতন বিশ্বাস বলেন, কৃষিকাজ ও গরুর উপর নির্ভর করেই মূলত আমার সংসার চলে। এক বছর পর পর একটি বা দুটি করে গরু বিক্রি করি। তিনি বলেন বলেন, আমাদের কাছে গরুর গোয়াল ঘরটাই ব্যাংকের মত যখন অর্থের প্রয়োজন হয় তখন গরু বিক্রি করে টাকা বের করি। এছাড়াও জমীর উদ্দিন, নুর ইসলাম, আক্কাসসহ কয়েকজন খামারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খামারে থাকা গরু বিক্রি করে ছেলে সন্তানদের প্রবাসে পাঠাচ্ছেন অনেকে আবার কিনছেন মাঠান জমি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্ন-মধবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কাছে পশুপালন করা একদিকে যেমন সম্মানের অপরদিকে অর্থের তাই পশু পালনের দিকেই ঝুঁকছেন তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত পশু পালনের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল তাই যেসব খামারিরা পশু পালন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে তাদেরকে আমাদের দপ্তর থেকে যথাসম্ভব প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে পাশাপাশি শালিখা উপজেলায় গত কয়েক বছরের চেয়ে বর্তমানে খামারির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।