সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক এর মালিক কোম্পানি মেটা রাজনৈতিক প্রচারণামূলক ও এমন অন্যান্য বিজ্ঞাপনে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনে ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি থাকা টুলগুলোয় বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে আইনপ্রণেতারাও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সোমবার রাতে ফেইসবুক হেল্প সেন্টারে নতুন আপডেট আনার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে মেটা। কোম্পানির বিজ্ঞাপনী মানদণ্ডে বিভিন্ন এমন কনটেন্টে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের’ প্রয়োজন পড়ে। তবে, এআইয়ের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম উল্লেখ নেই এতে।
‘ফেইসবুক অ্যাড ম্যানেজারে আমরা জেনারেটিভ এআইভিত্তিক বিজ্ঞাপন তৈরির টুল পরীক্ষা করলেও বিজ্ঞাপনদাতারা এখনও বিভিন্ন এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা ‘হাউজিং’, ‘কর্মসংস্থান’ , ‘ক্রেডিট’, ‘সামাজিক ব্যাধি’, ‘নির্বাচন’, ‘রাজনীতি’, ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক’ ‘ফার্মাস্যুটিকাল’ বা ‘আর্থিক সেবা’র শ্রেণিতে পড়ে। তবে, আমরা এগুলোতে এখন জেনারেটিভ এআইভিত্তিক ফিচার ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছি না’ নিজেদের এআই টুলের কার্যবিধি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছে ফেইসবুক।
‘আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞাপনে জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো আরো ভালোভাবে বুঝতে পারার পাশাপাশি এমন স্পর্শকাতর বিষয়াদি নিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে পারব’।
এক মাস আগে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য এআই টুল চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের জগতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মেটা। তবে, সম্প্রতি নিজস্ব নীতিমালায় পরিবর্তন আনল কোম্পানিটি। এআই টুলের বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে ছিল তাৎক্ষণিক ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি, ছবিতে সামঞ্জস্য আনা ও সহজ টেক্সট প্রম্পটের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো।
গেল বসন্তে প্রাথমিকভাবে এইসব এআই টুল ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলেন বিজ্ঞাপনদাতাদের ছোট এক অংশ। সে সময় কোম্পানি বলেছিল, সামনের বছর থেকে বিশ্বের সব বিজ্ঞাপনদাতার জন্য এ সুবিধা চালু হবে।
গত বছর চ্যাটজিপিটি উন্মোচনের জবাব হিসেবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে জেনারেটিভ এআইভিত্তিক বিজ্ঞাপনী পণ্য ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে মেটা। ব্যবহারকারীর বিভিন্ন টেক্সট প্রম্পটের জবাবে মানুষের মতো কথোপকথন চালিয়ে থাকে ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটবটটি।
বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের ব্যবস্থার নিরাপত্তায় কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবহার করে, সে বিষয়ে খুব কম তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে। ফলে, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে মেটার এমন সিদ্ধান্তকে এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির এআই নীতিমালা প্রকাশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
গত সপ্তাহে একই ধরনের ‘ইমেজ-কাস্টমাইজিং’ এআই অ্যাড টুল চালুর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল বিজ্ঞাপন কোম্পানি গুগল। আর নিজস্ব পণ্য থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন ‘রাজনৈতিক কিওয়ার্ড’ প্রম্পট হিসেবে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা রয়টার্সকে জানিয়েছেন গুগলের এক মুখপাত্র।
এদিকে, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে টিকটক ও স্ন্যাপচ্যাটের মালিক কোম্পানি স্ন্যাপও। অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যম এক্স এখনও জেনারেটিভ এআইভিত্তিক বিজ্ঞাপনী টুল চালু করার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
গত মাসে মেটার শীর্ষ কর্মকর্তা নিক ক্লেগ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার এমন বিষয়, যেখানে নিশ্চিতভাবেই কোম্পানির নীতিমালা অ্যাপডেট করার প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাজ্যে আয়োজিত সাম্প্রতিক এআই সম্মেলনের আগে তিনি সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রস্তুত থাকা উচিৎ। আর তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এমন কনটেন্টগুলোয় বিশেষ মনযোগ দিতে বলেছেন, যেগুলো ‘এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে’।
এর আগে ক্লেগ রয়টার্সকে বলেছিলেন, মেটার এআই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের ছবি তৈরির সুবিধা বন্ধ করেছে কোম্পানি। পাশাপাশি, গেল গ্রীষ্মে এআইয়ের তৈরি কনটেন্টে ‘ওয়াটারমার্ক’ যোগ করার ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে মেটা।
এআইয়ের তৈরি বিভ্রান্তিকর ভিডিওতে ক্ষুদ্র পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে মেটা। এর মধ্যে রয়েছে অর্গানিক পোস্টও। তবে, প্যারোডি বা স্যাটায়ারওয়ালা পোস্টের বেলায় সে নিয়মের প্রয়োগ নেই।