বাংলাদেশ বেতারে শিল্পীদের অডিশনের নামে রীতিমতো প্রহসন চলছে। প্রথা অনুযায়ী বেতারে অডিশনের সময় বিষয়ভিত্তিক গানের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ বিচারক থাকত এবং এতে বেতারের কোনো কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে থাকার নিয়ম ছিল না, থাকলেও গান জানা একজন নিজস্ব শিল্পী থাকত, কিন্তু কোনদিন কোনো কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে থাকত না, যা বেতারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এমনকি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী গান জানলেও কোনভাবেই কোনদিন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন না। কিন্তু এবার বাংলাদেশ বেতারের উপ মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান, চলতি দায়িত্ব) কামাল আহমেদ সকল বিষয়ের (রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক, লোক, উচ্চাঙ্গ) গানের জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি করে বিচার কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এই কমিটিতে বাইরের এক বা দুই জন নির্দিষ্ট বিচারক রেখে কামাল আহমেদ নিজেও বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেতারের তালিকাভুক্ত ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।
একাধিক শিল্পী ভোরের পাতাকে বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও সংগীত শিল্পীদের অডিশন হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ বিচারক ছিলেন, কিন্তু বিটিভির কোনো কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে ছিলেন না। বিটিভিতে দ্বিতীয় ধাপের অডিশন এখন চলমান এবং সেখানেও এ নিয়মেই বিচার কাজ অব্যহত আছে।
কিন্তু বেতারে উপ মহাপরিচালক কামাল আহমেদ নিজেকে স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জাহির করলেও বিশেষজ্ঞদের মতে তার গান গাওয়াই হয় না, কেননা তার কন্ঠ সংগীত উপযোগী নয়। এছাড়া তার স্বর প্রক্ষেপণ এবং উচ্চারণ কোনটাই সঠিক হয় না। তিনি আবার বিচারক হয়ে গেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতে অডিশন দিতে আসা শিল্পীদের গণহারে ফেল করিয়ে দিচ্ছেন এই বলে যে, তিনি ছাড়া কারোরই রবীন্দ্র সঙ্গীত হয় না। কামাল আহমেদ আবার নজরুল, আধুনিক, লোক এবং উচ্চাঙ্গসংগীতেরও বিচারক, অথচ দেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে তিনিই এ দায়িত্ব পালন করছেন। তার সাথে বেতারের উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও রেখেছেন বিচারকমণ্ডলীর প্যানেলে।
বর্তমান চলমান অডিশন প্যানেলে বেতারের বাইরে থেকে তিনি শুধুমাত্র জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী চন্দনা মজুমদারকে রেখেছেন। অথচ চন্দনা মজুমদারও শুধুমাত্র লোকসংগীতের শিল্পী। তাকে দিয়ে আধুনিক, নজরুল বা উচ্চাঙ্গ সংগীতের বিচার করানোও একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মোট কথা শিল্পীদের দেখভাল করার জন্য আলাদা বিভাগ থাকলেও কামাল আহমেদ তা অকার্যকর করে রেখেছেন।
এমনকি বেতারে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই কামাল আহমেদের গান রেডিওতে প্রচার করা হয়। কয়েকদিন পর পর বেতারের যন্ত্রপাতি, মিউজিশিয়ানদের ব্যবহার করে গান রেকর্ড করেন। বেতারের নিয়মানুযায়ী শিল্পীদের শ্রেণীভিত্তিক অনুষ্ঠান রেকর্ড করার নিয়ম। শ্রেণিগুলো হচ্ছে বিশেষ ক, খ, গ। কেউ ছয় মাসে একটি, কেউ তিন মাসে একটি, কেউ দুই মাস এবং কেউ প্রতি মাসে একটা প্রোগ্রাম পায়, কিন্তু বেতারের কর্মরত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী তালিকাভুক্তি সাপেক্ষে নির্দ্দিষ্ট সময় পর পর প্রোগ্রাম পাওয়ার কথা থাকলেও কামাল আহমেদ তার কোনো পরোয়া না করে অহরহ নির্দ্বিধায় প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেছে বেছে কিছু নির্দিষ্ট মহিলা শিল্পীর সাথে ডুয়েট গান করার জন্য শিডিউলের বাইরে রেকর্ড করেন এবং বলে বেড়ান মহিলা শিল্পীরা তার সাথে গান গাইবার জন্য উন্মুখ।
এসব রেকর্ড করার জন্য বেতারের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রী, স্টুডিও ইত্যাদি ব্যবহার করে যাচ্ছেন, কিন্তু যন্ত্রীদের কোন ওভারটাইম প্রদান করেন না।
বেতারের উপ মহপরিচালক (অনুষ্ঠান) কামাল আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় বেতারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের ভবিষ্যত অন্ধকারে পতিত হচ্ছে বলেও মনে করেন সংগীত জগতের অনেকে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এ মুহুর্তে তিনি একটা অডিশনে আছেন। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়, আপনি কিভাবে সংগীতের কয়েকটি বিভাগে বিচারক হয়ছেন? তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কেন্দ্রের প্রধান বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক মোহাম্মদ নাছিমুল কামালের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বেতারের পরিচালক মোহাম্মদ নাছিমুল কামালকে ফোন করা হলেও তিনি প্রশ্ন শুনে নিজে এখন অডিশনে আছেন বলে কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।
পরবর্তীতে তিনি কল ব্যাক করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঢাকা কেন্দ্র থেকে কোন অনিয়ম হয়নি। এমনকি কামাল আহমেদের গানও নিয়মিত পরিবেশন করা হয়না। সর্বশেষ তিনি জানুয়ারি মাসে কঠিন শর্ত মেনে একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন এবং তাকে শুধু রবীন্দ্র সঙ্গীত বিভাগের অডিশনে বিচারক হিসাবে রাখা হয়েছে।