তথ্য-প্রযুক্তি ও স্মার্ট ফোনের ব্যবহার ফ্রি-ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু ৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি ৯৯৯, টেনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারাম বোর্ড, ওয়ান এক্স বেটসহ বহু অনলাইন গেম এবং বাজি খেলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে আগামী নেটিজেনরা। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে নেই দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। শহর কিংবা গ্রাম, সবার হাতেই রয়েছে স্মার্ট ফোন। আর এই স্মার্ট ফোনের বদৌলতে খুব সহজেই অনলাইন বাজি খেলায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি দেখা দিয়েছে শহর ও গ্রামা লে। প্রযুক্তির নেশায় বিশেষ করে মোবাইলের মাধ্যমে লালমনিরহাট শহর ও গ্রামের তরুণরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এক সময় গ্রামে সন্ধ্যা হলে ছেলে-মেয়েরা পড়ার টেবিলে বসত পড়ালেখার শব্দ শোনা যেত। আর এখন সে দৃশ্য দেখা যায় না। প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল। সন্ধ্যা হলেই মোবাইল হাতে নদীর ধারে বা রাস্তার পাশে, ব্রিজের ওপরে অথবা কারও বাড়িতে এবং কারও দোকানে পাশে, যেখানে ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, সেখানে চলে যায়। বসে চলে মোবাইলে গেম খেলা। না হয় বাজির নামে জুয়া খেলা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা সদর সহ আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় জুড়ে মোবাইল জুয়ার শক্তিশালী একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। একজন জেলা সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে একজনকে কমিশন ভিত্তিক এজেন্ট দেয়া হয়েছে। উপজেলা এজেন্টের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের হাট-বাজারে কমিশন ভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ দেন। এসব এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে আগাম নগদ বা কেউ বিকাশে টাকা জমা দিয়ে অনলাইন গেমিং এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। কারও দোকান, ভবন, গাছতলা কিংবা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে মাথা ঝুঁকে মোবাইলে জুয়ার আসর বসছে দলবদ্ধভাবে। এতে কেউ ফ্রি-ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু ৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি ৯৯৯, টেনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারাম বোর্ড, ওয়ান এক্স বেটসহ বহু অনলাইন গেম এবং বাজি খেলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে আগামী প্রজন্ম। খেলাধুলা, পড়াশোনা, কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় উঠতি বয়সের কিশোররা পড়াশোনা বিমূখ হবার পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না অনলাইন বাজি খেলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক বলেন, পড়াশোনা করেছি। আবার কেউ কেউ কয়েক বছর আগে পড়াশোনা বাদ দিয়েছি। এই বাজি খেলতে গিয়ে আমার লেখাপড়া শেষ। টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট মোবাইল কিনেছি। আমার ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে একাউন্ট আছে। প্রতিদিন এমবি কিনে মোবাইলে বাজি এবং অনলাইন গেম খেলি। সার্ভার বন্ধ থাকলেও ডিপিএন-এর মাধ্যমে এসব গেম ও বাজি খেলা যায়। এতে কোন কোন দিন আমার লাভ হয়। তাছাড়া বেশিভাগ সময় আম লস হয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন বাজি ধরা অ্যাপস-এ বাজি খেলে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছে। শহরা লের পাশাপাশি গ্রামেও পৌঁছে গেছে মোবাইল গেমস। এক সময় সন্ধ্যা নামলে ঘরে ঘরে পড়ার শব্দ শোনা যেত এখন মোবাইল গেমস খেলার জন্য নদীর তীরে চলে যায়। রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত গেমস খেলে, সকাল ৯ টায় ঘুম থেকে উঠে। সমাজের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ আইন শঙ্খলা বাহিনী অভিযানের আহবান জানান অভিভাবকরা।