প্রকাশ: রোববার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩, ৯:৩৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শীত মৌসুম আসতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার গ্রামা লে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রাতে ঠান্ডা-হিমেল বায়ু আর সকালের শিশির ভেজা ঘাস-পাতাই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিকারী গাছিদের মহা ব্যস্ততা। চলনবিলের গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ। শীত এগিয়ে আসছে। অযতœ ও অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছের কদরও বেড়েছে। খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে প্রতিদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরাও। অনেকেই আবার মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
রোববার গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, জীবনের ঝুকি নিয়ে গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেধে খেজুরের গাছ তৈরি শেষে রস সংগ্রহের জন্য ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে ঝুলে রস সংগ্রহ শুরু করেছে। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে রয়েছে সাড়ি সাড়ি খেজুর গাছ। সেই সব খেজুর গাছে প্রতিদিন বিকালে গাছিরা সনাতন পদ্ধতিতে খজুরের গাছ তৈরি শেষে মাটির খালি হাঁড়ী লাগিয়ে আশে। ভোরের সৃর্য্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রসের হাঁড়ী পেরে বাড়িতে নিয়ে আশে গাছিরা। এই রস টিনের কাড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করে গুড় ও পাটালি। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটারি। যার সাদ ও ঘ্রান আলাদা। পুরো শীত মৌসুমে চলে এর পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার পালা।
এছাড়া খেজুর গুড় দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠা, পুলি, মুড়ির মোয়া,চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে যায় গ্রামে গ্রামে। তবে অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে এবং চার থেকে পাঁচ মাস ব্যাপি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি হবে বলে জানান গাছিরা। খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায় এবং অনেকে আবার বানিজিক ভাবে গুড় তৈরি ও করে বাজারে বিক্রি করছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাড়ানপুর গ্রামের কৃষক মোঃ সামছু, মেনাজ, সবুল ও সহিদুল জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের খেজুর গাছের সাথে গ্রামের অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে বানিজিক ভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিক কে ভাগ দিয়ে ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বাজারে বিক্রি করে থাকি। তারা আরোও জানান, খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রস ভর্ত্তি হাঁড়ী দেখলে সেই কষ্টের কথা ভুলে যাই তবে গুড় তৈরির উপকরন এবার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গুড়ের দামও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন।
গুরুদাসপুর রোজি মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন বলেন, খেজুর গাছ ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যেত শীতের সকালে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, বাঁশের ভাঁড়ে কলস বেঁধে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করত। এছাড়াও খেজুরের রসের পিঠা পুলি লোভনীয়। শীত কালের বেশির ভাগ পিঠাই তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই দেখা যায় বাড়ি বাড়ি পিঠা পুলির উৎসবের ধুম পড়েছে। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্ভি হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৭৫ হাজার ৯৪০ খেজুর গাছে গুড় উৎপাদন হয় ১ হাজার ৩২ মেট্রিক টন।