মামলায় আসামির তালিকায় ১৪ নম্বরে আছেন মকবুল হোসেন। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সব দেখছেন। ওমরায় এসে শুনলাম আমি নাকি গাড়ি ভাঙচুর করেছি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টঙ্গী পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ হোসেন বলেন, ‘মামলাটির তদন্তভার আমাকে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া না গেলে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নাম বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়। যাদের সবাইকে জামায়াত ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উল্লেখ করা বেশির ভাগ আসামিই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এই মামলার আসামি মকবুল হোসেন ওমরাহ করতে গিয়েছেন তা আমি জানি। এ ছাড়া অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমরা জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করার কারণে এলাকার সবাইকে চিনি। তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। নইলে দলের বিষয়ে লোকজনের ক্ষোভ তৈরি হয় এবং আমাদের ওপর চাপ আসে।’
মামলায় ১৯ নম্বরে নাম থাকা নাসির মোল্লা বলেন, ‘বাড়ির জমি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মীর সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। এ কারণে আসামি করা হয়েছে। এমনকি একসঙ্গে চলা-ফেরা করায় আমার তিন বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে এই মামলায়। বন্ধুরা কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও আসামি হওয়ায় ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
মামলায় ২০ নম্বরে নাম থাকা হাবি উল্লাহ জানান, তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন। তিনি কোনো মিছিলে অংশ নেননি। অথচ মামলায় আসামি করে বলা হচ্ছে রাতে গাড়ি ভাঙচুর করতে গেছেন। তিনি সাধারণ মানুষকে হয়রানি থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। এ ছাড়া মামলায় ১৭ নম্বরে আসামি হিসেবে রয়েছে মনির হোসেন নামের একজনের। যিনি এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে টঙ্গীর গুটিয়া–গুশুলিয়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মানুষকে ‘গায়েবি’ মামলায় আসামি করায় এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমনকি অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, গ্রামে সবাই সবার আত্মীয়। দু-একজনের কথায় এভাবে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া ঠিক হয়নি। এসব মামলার কারণে তাঁরা এলাকায় চাপের মুখে পড়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার করা গাড়ি ভাঙচুরের মামলার বাদী হলেন টঙ্গী পশ্চিম থানার এসআই আবদুল আওয়াল। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ১ নভেম্বর রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় সংবাদ পান, জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা লাঠি-সোটা, ইট-পাটকেল নিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার কলেজ গেট থেকে হোসেন মার্কেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। পরে আউচপাড়াস্থ সফিউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাত প্রায় ৯টার দিকে পৌঁছে দেখতে পান যে, জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মীরা সড়কের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর থেকে থামানোর চেষ্টা করলে তাঁরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা পালিয়ে যান। পরে একটি মোটরসাইকেল, চারটি পাইপ, ১০টি বাঁশের লাঠি, ১৫টি ভাঙা ইটের টুকরা, ১২টি ভাঙা কাচের টুকরা এবং দুই লিটার পেট্রল জাতীয় দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে গত ১ নভেম্বর রাতে টঙ্গীর সফিউদ্দিন স্কুল সংলগ্ন এলাকায় এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটি সদ্য বদলি হওয়া ওসি (শাহ আলম) থাকাকালীন মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।’