বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন, "লন্ডন প্রবাসী দণ্ডিত নেতা তারেক রহমানের রাহুগ্রাস হতে বিএনপিকে বাঁচাতে হবে।"
রাষ্ট্র স্বার্থকে বড় করে দেখে বিএনপির গ্রহণযোগ্য একশত নেতাকে জাতীয় নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে সংসদে যেতে হবে বলেও মনে করছেন ২০১৫ সাল থেকে দলটির পুনর্গঠনের এই নেতা।
আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন নাসিম।
লেখক, গবেষক, কবি, আবৃত্তিকার, গায়ক কিংবা নির্মাতা বিভিন্ন পরিচয়ে নিজের দার্শনিক অভিজ্ঞান নিয়ে নাসিম মানুষের সামনে হাজির হলেও নিজের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই নানা ধরণের ঝুঁকি আছে জেনেও তিনি ক্রেডিবল একটি কাউন্সিল করার মধ্য দিয়ে বিএনপি পুনর্গঠন করতে চান বলে বিশ্বাস করেন।
নাসিম বলেন, ' সেই অর্থবহ কাউন্সিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে করতে গেলে দেশের অগণিত বিএনপির অনুসারীরা ভুল বুঝতে পারে, এমন শংকায় তিনি আগামী বছরের জুলাই মাসটিকে বেছে নিতে চান বলে ঘোষণা করেছেন। তবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকা গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে বিএনপির গ্রহণযোগ্য নেতাদেরকে এখন জাতীয়তাবাদী পর্যায়ের অপরাপর প্ল্যাটফর্ম থেকে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে হবে বলে মনে করার সুযোগ আছে। আপাতভাবে, রাজনৈতিকভাবে এমন উদ্যোগ কোরামিনের মত করে কাজ হবে। তাঁরাই আবার ২০২৪ সালের কাউন্সিলে মূল দল বিএনপির হয়ে ফিরতে পারবেন। দলটির পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসাবে তা ঘোষণা রাখছি।
নাসিম বলেন, 'বিএনপির গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংশোধনী নির্বাচন কমিশন কেন গ্রহণ করল, তা বোধগম্য নয়। দলের দুই অবৈধ শীর্ষ নেতা বেগম জিয়া ও তারেক রহমান যখন একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়, তখন দলের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নং ধারা বাদ দেয়া হয়। অথচ, তারেক রহমানের চাকুরি করা রাজনীতিকেরা বলে থাকেন যে, এটি ২০১৬ সালের কাউন্সিলে বাদ দেয়া হয়েছিল। যা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়, কারণ, তাঁরা যে সংশোধনী নিয়ে এসেছিল, তা দণ্ডিত হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছিল।'
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে নাসিম বলেন, 'ওই সংশোধনের আগে গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় বলা ছিল, কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা-নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যে কোন পর্যায়ের যে কোন নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি বিএনপি পুনর্গঠনের ডাক দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন তিনি। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির ‘পাঁচটি অসুখ’ হয়েছে বলে তিনি দলটির পুনর্গঠন করার ঘোষণা দেন। নাসিমের অভিযোগ ছিল, দলটি জাতীয়তাবাদী নয়, ‘জামায়াতেবাদী’ দল হয়ে পড়েছে। দলটি নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে সঙ্গী করেছে। বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি দলটি করছে না। এবং দুই শীর্ষ নেতৃত্ব বেগম জিয়া ও তারেক রহমান দল পরিচালনায় ব্যর্থ এবং প্রাসঙ্গিক বাস্তবতায় তারা দলের অবৈধ নেতৃত্ব।
নাসিম স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, "চোখ বন্ধ করে পুনরায় দেখুন। বিএনপির পাঁচটি অসুখ কী সারানো গিয়েছে? কিন্তু সারাতে হবে।"
নাসিম বলেন, “নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে প্রতীকী উচ্চ আদালত বসিয়ে কাউন্সিল করতে হবে। পাঁচটি অসুখ সারাতে হবে। দল কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। আবার, দলের মধ্যেই যখন কোন গণতন্ত্র নেই, রাষ্ট্রের কাছে কেন তাহলে গণতন্ত্র চাওয়া হচ্ছে? এই বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে এরা দানব হয়ে উঠবে। কাজেই পুনর্গঠন করেই বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। পথ এখন দুইটা- আত্মশুদ্ধি, নতুবা বিলুপ্তি। তবে বিলুপ্তির পথে অন্তরায় হবে, যখন আমরা দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব। অর্থাৎ আগামী বছরে যদি কাউন্সিল করে শপথ নেয়া যায়, বিএনপি থাকবে, নতুবা সন্ত্রাসী দল হিসাবে গণ্য হয়ে মরবে।
অন্যদিকে, এখন আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে সাময়িক পথ খুঁজে নিতে হবে। আর তা হল, শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের তথা ১০০ জনের মত নেতাকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হতে হবে।"
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে নাসিম প্রায় ত্রিশটির মত কর্মসূচি রাখেন। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসাতে সক্ষম হন। সেই প্রতীকী আদালত থেকে দু’টো রায় পান। এক- দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা হল। দুই- জাতীয়তবাদী জনতার উচ্চ আদালত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বসবে।
সংস্কার প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত ফলফলের দিকে নিয়ে যেতে নাসিম ও তাঁর জাতীয়তাবাদী অনুসারীরা ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি, ১৭ জানুয়ারি, ১৭ মে ও ৫ সেপ্টেম্বর মোট চারবার দলীয় বিপ্লবের মহড়ার আদলে বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেন এবং প্রতিবারই বাঁধার সম্মুখীন হন।
এদিকে ২০২২ সালের শেষভাগেও নাসিমের একটি মিছিল কার্যালয় অভিমুখে গিয়েছিল, যা বিএনপির মূলধারার পক্ষ দ্বারা বরাবরের মতো প্রতিহত করা হয়।