গত ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু। এ নিয়ে প্রেমিক উরফি জিয়ার সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হতো। ৩/৪ বার আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে এবার আত্মহত্যা করেই বসলেন!
বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হিমু বলেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। তবে উরফি জিয়া পাত্তা দেননি। পরে জিয়ার সামনেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এদিকে হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় উরফি জিয়াকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়েছে। পরে শুক্রবার রাজধানীর বংশাল থেকে উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
জিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা গেছে, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রাফির বিয়ে হয়েছিল এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাদে রাফির সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। খালাতো বোনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও হিমু আর জিয়ার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
হিমুর ২০০০ সালে বিয়ে হয় ও ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে তৌফিক নামে একজনের সুসম্পর্ক হয় হিমুর। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে ২০১৭-১৮ সালে তৌফিক সুইসাইড করেন, এরপর হিমু মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। এরপর থেকেই জিয়ার সঙ্গে হিমুর সুসম্পর্ক হয়।
২০২০ সালে জিয়া অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখে। ৪ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে জিয়া ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
গত ২-৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে জিয়া জানান। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাক্বিতণ্ডা ও মনোমালিন্য হতো।
জিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরবর্তী সময়ে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়ার মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। হিমু রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢোকেন। রুমের সিলিং ফ্যান ঝোলানোর হুকে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে তাকে হুমকি দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া জানান, হিমু আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখে হিমু সত্যি সত্যি ফাঁস দিয়েছে। তখন সে হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এ সময় জিয়া পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়। পরবর্তীতে জিয়া, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক সুইসাইড কেস বলে পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেন তখনই হিমুর দুটি মোবাইল ও হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান রাফি।
খন্দকার আল মঈন জানান, জিয়া ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেয়। এরপর মোবাইল ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে বংশাল এলাকায় যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।