ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড.এস ওয়াই কোরাইশি সাংবাদিকদের বলেন, একটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে। তাদের ওপর কেন বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না তার কোনো কারণ আমি দেখি না। বাংলাদেশের ইসির ক্ষমতা আছে। তারপরও বিগত নির্বাচন গুলোর মধ্যে কয়েকটি নির্বাচন একপক্ষীয় ছিল। যে কারণে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার দেশের (ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ) নির্বাচনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ) নামে একটি অনিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ব্যানারে রোববর (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ভারত নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি।
ইসির কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে ড.এস ওয়াই কোরাইশি বলেন, এটা আমি জানি না। এটা ইসি ব্যাখ্যা দিতে পারবে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ভারতের নির্বাচন কমিশনের যে সমস্ত ক্ষমতা আছে, সেই সমস্ত ক্ষমতা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনেরও আছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত অন্তর্বতীকালীন সরকারের মতো দায়িত্ব পালন করে। ভারতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কমিশন সর্বময় ক্ষমতা পায়। কোনো প্রধানমন্ত্রী থাকে না, মুখ্যমন্ত্রী থাকে না। ইসির অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
কোরাইশি বলেন, ভারতের ইসি ক্ষমতাসীন সরকারকে অকার্যকর করে ফেলে। তারা (ভারতের সরকার) নতুন কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি নিতে পারে না। কাউকে বদলি করতে পারে না। এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা বাড়ে।
প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলো- ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড.এস ওয়াই কোরাইশি, মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান ফুয়াদ তৌফিক, শ্রীলংকার নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আরএমএএল রথনায়েক, নেপালের নির্বাচন কমিশনার সাগুন শামসের জে বি রানা ও নেপালের সাবেক নির্বাচন কমিশনার ইলা শর্মা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চারজন প্রতিনিধি ও ইসির চার কমিশনারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে ইএমএফ’র পরিচালক আব্দুল জব্বার খান বলেন, আমরা ইসির কাছে নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। কোন চাপ আছে কিনা সেটি জানতে চেয়েছি। আমরা জানিয়েছি বাংলাদেশ সরকারের আগামী নির্বাচনটি যেন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে বৃহৎ যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, এখনও যেহেতু নির্বাচন পদ্ধতি তাদের মূল এজেন্ডা যে, নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কার অধীনে হবে। কাজেই সেই হিসেবে তাদেরকে দুইবার সংলাপের চেষ্টা করেও তারা (ইসি) সংলাপে বসতে পারেননি এবং সেই কারণে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটু হতাশা আছে আমরা যেটি বুঝলাম।
তিনি বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম মনে করে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখানে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব সরকারেরই প্রথম, কাজেই সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে এবং সেই সংলাপের মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ইনক্লুড করে কীভাবে একটি সুন্দর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈঠকের পর ইসি সচিব সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের ব্যানারে পাঁচজন বিদেশি মেহমানসহ একটি প্রতিনিধিদল কমিশনের কাছে আগেই সময় চেয়েছিল। তাদের চাহিদামতো বেলা ১১টা থেকে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের দেশে নির্বাচন পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে, আমাদের নির্বাচন কমিশন কীভাবে কাজ করে সেটাই মূলত তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে। উনারা কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় জানতে চেয়েছিলেন। এটা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল, যে তাদের দেশগুলোতে কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে।
তারা কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, না। কোনো পরামর্শ বা সাজেশন কিচ্ছু হয়নি। মূলত ওই রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচন ব্যবস্থা ও আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে মতের আদান-প্রদান হয়েছে। সেসব দেশে নির্বাচন কীভাবে হয় আমরা জানতে পেরেছি। সেখান থেকে এডাপ্টেশনের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে কমিশন সেটা নেবে। একেক জায়গায় একেক রকম। চারটা দেশে চার রকম।
তফসিল ঘোষণার অনুকূল পরিবেশ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, অবশ্যই। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সব কার্যক্রম সম্পন্ন করছে।