তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে স্হায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এ দাবি মিডিয়ায় আসার পর থেকেই মাওলানা সাদের অনুসারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমনকি তারা মিডিয়ায় বিবৃতি পাঠিয়ে বিষয়টির প্রতিবাদ করেছে।
‘তাবলীগের বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকুন প্রিয় ওলামা হাযরাত!’ শিরোনামে আজ বৃহস্পতিবা (২৬ অক্টোবর) মাওলানা সাদের অনুসারী তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা জিয়া ইবনে কাসেম, মুফতি ওসামা ইসলাম, মুফতি আযীমুদ্দীন, মাওলানা মুয়াজ আব্দুল্লাহ নূর, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুফতি শফিউল্লাহ মক্কীর এক যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে।
এতে বলা হয়, দেওবন্দের ফতোয়ার অজুহাত দিয়ে উনারা যে বিরোধিতার পথ এবং পন্থা অবলম্বন করছেন আদৌ কি দেওবন্দ তা সমর্থন করে? আহলে দেওবন্দ বা ওলামায়ে কেরাম জাতির অভিভাবক। দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ হলে উভয়কে মিলিয়ে দেওয়া বা উভয়ের ব্যাপারে নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করা,এটাইতো ছিল উনাদের জিম্মাদারি! কিন্তু আফসোস যে এদেশে আমরা দেখছি একদিকে উনারা তাবলীগের একটি পক্ষকে যেমন সমর্থন করছেন, ঠিক তেমনি আরেকটি পক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেওবন্দের উসুল আদর্শকে ভেঙ্গে ফেলছেন। একজন মানুষ হিসেবে মাওলানা সাদ সাহেব এবং যেকোনো ব্যক্তি কখনো ভুলের ঊর্ধ্বে হতে পারেন না। দেওবন্দ অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে তাকে সংশোধন করতেই পারেন। কিন্তু সংশোধনের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের কোন ইজতেমা জোর এবং কোন প্রোগ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে এবং তার পোগ্রামে কারো অংশ অংশগ্রহণের ব্যাপারে কখনো কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং না দেওবন্দের ছাত্রদেরকে তার বিরোধিতার জন্য মাঠে নামিয়েছেন। বরং স্পষ্টত বারবার দেওবন্দ এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে যে হাম কিসিকে জানেবদার নেহি হ্যায় অর্থাৎ আমরা তাবলীগের বিষয়ে কোন পক্ষাবলম্বন করছি না। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম দেওবন্দের বিরোধিতার পথ পন্থা অবলম্বনের কোন তোয়াক্কা করছেন কি? ইন্ডিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় মজমায় মাওলানা সাদ সাহেব উপস্থিত হচ্ছেন এবং কেউ তাকে বাধা দিচ্ছেন না। তাহলে আমরা কেন বলছি যে উনাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না? সম্ভবত এরকম ফতোয়ার আবিষ্কার আমরাই প্রথম। কোন অধিকারে আমরা তার পথ রোদ করছি?! এদেশে কত নায়ক গায়ক কত সিঙ্গার এবং অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় যাজক বা পোপ এসে তাদের প্রোগ্রাম করতে পারলে মাওলানা সাদ সাহেব কেন এ দেশে আসতে পারবেন না? যদি আপনারা বলেন, এটা ধর্মীয় বিষয়। ধর্মীয় অঙ্গন আমাদের কথায় চলবে। তাহলে বলবো, বিভিন্ন মাজার ভক্ত তরিকত পন্থী লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতাদেরকে যখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তখন কি আপনারা এদের বিরোধিতা করছেন? অথবা জামাতে ইসলামী ছড়ছিনা আলিয়া মাদ্রাসা আহলে হাদিস এই সবকিছুই আপনাদের মতাদর্শ বিরোধী। এগুলোতো আমাদের দেশেই স্বাধীনভাবে চলছে এবং তাদের মত করে চলছে। কোথায়, আপনারা তো এর বিরোধিতা করছেননা? তাহলে কেন মাওলানা সাদ সাহেবের আসার ব্যাপারে আমাদের এই বিরোধিতামুলোক পদক্ষেপ? অনেকের মনেই কিন্তু আজ প্রশ্ন যে,হেফাজতের কেউ কেউ শুরাপন্থীদের সাথে বড় কোনো লেনদেন করে ফেলেছেন। যার ফলে বিনা কারণে তারা তবলিগের ইস্যুকে হেফাজতের মঞ্চে নিয়ে আসছেন। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, শত্রুর সাথেও এতো কঠোরতা করোনা যে,পরে সে বন্ধু হয়ে গেলে তোমার আফসোস করতে হয়ে। ওলামায় কেরামের খেদমতে সবিনয় বলতে চাই, আপনারা যাদেরকে ওলামাপন্থী বা আপনাদের অনুগত মনে করছেন, বাস্তবে কি তারা আপনাদের অনুগত? আর যাদেরকে আপনাদের বিরোধী বলছেন, আসলেই কি তারা ওলামা বিরোধী? যদি তাদের মধ্যে কোন ভুল বা অপরাধ থেকে থাকে তাদেরকে দূরে ঠেলে দেওয়াটাই কি সমাধান? না কি দূরত্ব কমিয় তাদেরকে কাছে আসার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া ওলামাদের জিম্মাদারী! প্লিজ বিষয়টি ভাববেন।