প্রকাশ: বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৫৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
গ্রামবাংলায় এক সময় চার বেহারার পালকিতে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের কথাবার্তা উভয়ের পরিবারের মধ্যে পাকা হলেই ডাকা হতো পালকিওয়ালাদের। লাল শাড়িতে লাজুক হেসে কনে বসত পালকিতে আর ঘোড়ায় চেপে চলত বর। গ্রামীণ পরিবেশে পালকিতে চড়ে বউ যাচ্ছে তার শ^শুরবাড়ি, এমন দৃশ্য কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও এই আধুনিক যুগে এসে দেখা মিললো নাটোরের গুরুদাসপুরে। গ্রামবাংলার এমন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে আয়োজন করা হয় পালকিতে বিয়ে। মাথায় পাগড়ি পরে সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়ে কনের বাড়িতে গেলেন বরযাত্রী। বিয়ে শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাথায় লাল গামছা বেঁধে, গায়ে সাদা গেঞ্জির সঙ্গে সাদা ধবধবে লুঙ্গি পরে বেহারা সেজেছিলেন বরের চার বন্ধু। বেহারাদের মুখে ‘হুন হুনা হুন’ ধ্বনি না থাকলেও ছিল দারুণ হাসি। গ্রামবাংলার এমন হারানো ঐতিহ্য দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীর মাঝে হৈচৈ পড়ে যায়।
এমন ঘটনা গুরুদাসপুর পৌরসভার দক্ষিন নারিবাড়ি মহল্লার মোঃ আফাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ সাগর আলী (২৬)। তিনি পিবিএস শেষ করে বাড়িতে রয়েছেন। কনে একই মহল্লার মোঃ আলাল উদ্দিন সরদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার তুইশি (২০)। তিনিও এইচএসসি শেষ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই উভয়ের পরিবারের বাবা মায়ের শখ তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখবেন। আর এ জন্য ছেলে যাবেন ঘোড়ায় চড়ে শ^শুরবাড়ি আর কনে আসবেন পালকিতে চড়ে তার শ^শুরবাড়ি। পাশাপাশি গ্রামবাংলার যে ঐতিহ্য, সেই ঐতিহ্যকেও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবেন তারা। গত রোববার থেকে তিনদিন ব্যাপী এই বিয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মঙ্গলবার।
সোমবার দুপুরে ঘোড়ায় চড়ে নিজ বাড়ি থেকে বর ও বরযাত্রী নিয়ে শ^শুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। গ্রামের দুই কিলোমিটার মেঠো পথ মাড়িয়ে শ^শুর বাড়িতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রবেশ করেন বর। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে চলে বরযাত্রীদের মধ্যাহ্ন ভোজন। পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে শেষে চার বেহারার পালকিতে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরেন বর সাগর আলী। এ দিকে ঘোড়ায় চড়া বর ও ফুল দিয়ে সাজানো গ্রামীণ পালকিতে বউ দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু বিয়ে বাড়িতে ভিড় জমান।
বিয়েতে আসা কনের বান্ধবী জান্নাত বলেন,‘দাদি-নানির মুখ থেকে পালকিতে বিয়ের গল্প শুনেছেন। আজ নিজে প্রাচীন সেই ঐতিহ্যবাহী পালকিতে বিয়ের অনুষ্টানে অংশগ্রহণ করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। তাছাড়াও তার মত নতুন প্রজন্মের অনেকেই পালকি বিয়ে সম্পর্কে জানতে পারবে। এমন ধারা অব্যাহত থাকুক।’
কনের ভাই প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম জানান,‘তার বাবা মারা যাওয়ার পূর্বে ইচ্ছে পোষণ করে গিয়ে ছিলেন তার বোনের যেন পালকিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মরহুম বাবার ইচ্ছেতেই এই আয়োজন করা হয়েছে। তাছাড়াও বিয়ে বাড়িতে সব কিছুই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে বিভিন্ন ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। তিনদিন ব্যাপী বিয়েতে গ্রাম ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিলো। নানা আয়োজন আর আনন্দ উল্লাশে বিয়ে সম্পুন্ন হয়েছে।’
কনে সুমাইয়া আক্তার তুইশি বলেন,‘এমন আয়োজনে তিনি অনেক খুশি। তার বাবা মায়ের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। তাছাড়াও বিয়ের একটি সুন্দর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য পালিকিতে বিয়ে। বর ঘোড়ায় চরে তাদের বাড়িতে এসেছেন এবং তিনি পালকিতে চড়ে বরের বাড়িতে গিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে দারুন অনুভূতি।’
বর সাগর আলী জানান,‘মূলত তাদের উভয়ের পরিবারের ইচ্ছে ছিলো পালকিতে বিয়ে। আধুনিক যুগেও যে প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এমন সুন্দর আয়োজন করা যায় সেটা তাদের বিয়েতে পালকি ও ঘোড়া না থাকলে বুঝতেই পারতেন না। কারণ আধুনিক এযুগের বিয়েতে সচরাচর বাস-মাইক্রোবাস দেখা যায়।