চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়ে শখের বসে প্রাণিদের খাবার দিয়েছেন কিংবা বানরকে উত্যক্ত করতে খোঁচা দিয়েছেন এমন অনেক কাণ্ডই ঘটিয়েছেন। কিন্তু এখন থেকে এ বিষয়গুলো আর করা যাবে না। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়ে কোনো দর্শনার্থী প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। এক্ষেত্রে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। এছাড়া চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীকে জখম করলে বা অনুমতি ছাড়া খাবার দিলে দুই মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সংসদ অধিবেশনে কণ্ঠভোটে চিড়িয়াখানা বিল-২০২৩ পাস হয়। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সংসদে বিলটি পাসের জন্য তোলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
আইনে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় গিয়ে কোনো দর্শনার্থী প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ হাজার টাকা আদায় করা যাবে। এছাড়া কোনো দর্শনার্থী চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণিকে কোনোভাবে আঘাত বা জখম করলে বা কিউরেটরের নির্দেশনা অমান্য করে বা অনুমতি ছাড়া খাবার দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এজন্য ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব অপরাধের বিচার করা যাবে।
দেশের সব সরকারি চিড়িয়াখানা বিলটির অধীনে পরিচালিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো দর্শনার্থী ফি ছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলে তার কাছ থেকে প্রবেশ ফির সমপরিমাণ মূল্য আদায় করা হবে।
মাত্রা বিবেচনা করে ২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। বিলে চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণির বয়সজনিত শারীরিক অক্ষমতা বা সংক্রামক রোগ থেকে অন্য কোনো প্রাণীর জীবন রক্ষার্থে বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রাণীর অসহনীয় ক্লেশ নিবারণের জন্য ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই একই প্রজাতির একই লিঙ্গের একটি প্রাণি রাখা যাবে না। ভেটেরিনারি কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়া প্রকৃতিগত কারণে দলবদ্ধভাবে অবস্থানকারী প্রাণিদের মধ্য থেকে কোনো প্রাণিকে আলাদা বা এককভাবে রাখা যাবে না। প্রাণির প্রকৃতি বিবেচনা করে ন্যূনতম প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সুবিধাসম্পন্ন খাঁচায় আবদ্ধ বা মুক্ত রাখতে হবে।
প্রাণির প্রকৃতিগত আচরণ, সংশ্লিষ্ট প্রাণির লালন-পালনে নিয়োজিত ব্যক্তি ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে প্রাণির খাঁচার অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। কোনো বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য সরকার এক বা একাধিক চিড়িয়াখানা নির্দিষ্ট করতে পারবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো চিড়িয়াখানায় বিদেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণি কেনা, বিনিময়, উপহার হিসেবে বা অন্য কোনোভাবে সংগ্রহ করা যাবে না। চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণিকে লোকালয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ‘চিড়িয়াখানা বিল-২০২৩’ উত্থাপন করেন। পরে তা ৩৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট উপাস্থানের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।