প্রকাশ: সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৩৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আব্দুস সালাম ব্যাপারী (৫৭)। বাগেরহাটের মোংলা পৌর শহরের কুমারখালির বাসিন্দা, পেশায় বন্দরের একজন শ্রমিক। কিন্তু কেউ মারা গেলে খবর পেয়ে ছুটে যান মৃত মানুষের বাড়ীতে। স্বেচ্ছায় মৃত ব্যক্তির শেষ বিদায়ের গোসলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই দায়িত্ব তিনি ৩০ বছর ধরে করে আসছেন। ধর্মীয় রীতি মেনে পরিশুদ্ধ গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। দীর্ঘদিন ধরে নিজ হাতে অন্তত দুই হাজার ৭০০ মৃত মানুষের গোসল করিয়েছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মরদেহের গোসল করাতে চান বলেও জানান সালাম ব্যাপারী।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৭ বছর বয়স থেকে তার শ্বশুর মোংলা কবরস্থানের মুসলিম আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী মোতাহার দরবেশের ছোট ভাই মোমিন মৌলিভীর কাছ থেকে মরদেহের গোসলের নিয়ম কানুন শেখেন। তার শ্বশুরের অসংখ্য মরদেহের গোসলে সহযোগিতা করেছেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের ৩ মে তার শ্বশুর মোমিন মৌলভী মারা গেলে, মরদেহ গোসলের কাজটি এককভাবে দায়িত্বের সঙ্গে করে আসছেন তিনি। তবে এ কাজে কারও কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক নেননা বলেও জানায় সে।
আব্দুস সালাম ব্যাপারী বলেন, করোনা মহামারির সময় আক্রান্ত মরদেহের গোসল করাতেও পিছপা হননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করিয়েছেন অসংখ্য মানুষের শেষবিদায়ের গোসল। মরদেহের গোসল সওয়াবের কাজ। এখানে ভয়ের কিছু নেই। আল্লাহকে রাজিখুশি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই দীর্ঘবছর এই কাজ করে আসছেন বলে জানান।
সালাম ব্যাপারী আরও বলেন, মোংলা শহরে কেউ মারা গেলে তার শ্বশুরকে ডাকতেন। তখন তার সাথে সালামও যেতেন। এভাবেই তিনি পরিচিত হয়ে যান। এখন এ কাজ তিনি একাই করেন। মৃত্যুর খবর পেলেই ছুটে যান সেই বাড়ীতে। স্বেচ্ছায় মরদেহের গোসল করা এবং কাফনের কাপড়ও পরান। এছাড়া পৌর শহরের বাইরে থেকেও কেউ ডাকলে ছুটে যান তিনি। তবে একাজে দু'একজনের প্রয়োজন হয়। সেসময় তিনি কাউকে ডাকলে ভয়ে কেউ আসতে চাননা। পরে তিনি একাই এ কাজ করেন।
তার এই মানবিক কাজের প্রশাংসা করে মোংলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক নুর আলম শেখ বলেন, 'কোথাও কেউ মারা গেলে সালাম ব্যাপারীকে ডাকা লাগেনা। সাথে সাথেই নিঃস্বার্থভাবে ছুটে যান তিনি। মৃত ব্যক্তিকে শেষগোসল থেকে শুরু করে কবরে রাখা পর্যন্ত তিনি প্রস্থান করেন। করোনাকালে সাহসের সাথে অসংখ্য মানুষকে তিনি গোসল করিয়েছেন। এটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যুগে যুগে সালামের মতো অনেক মানবিক মানুষ তৈরি হয়েছে, কিন্তু সমাজ তাদেরকে মনে না রাখলেও পরকালে তারা বড় পুরস্কার পাবেন। এটাই কাম্য'
সালাম ব্যাপারী তিন কন্যা, এক স্ত্রী ও মাকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন পৌর শহরের কুমারখালি এলাকায়। আয়ের উৎস বলতে বন্দরের শ্রমিকের সামান্য আয় এবং মরদেহ গোসলের কাজে পৌরসভা থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় হাজার টাকা। তবে তা গত দেড় বছর ধরে এই ভাতা চালু করেন মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান। সামান্য এই ভাতায় সংসার কিভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজের অনেক ভাল মানুষ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাকে চাল, মাছ, ফল ও ঔষুধসহ বাজার করে দেন। তা দিয়ে কোনভাবে চলে তার সংসার। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোন ভাতা চালু করলে তার তিনটি মেয়ের ভবিষ্যৎ করে যেতে চান মানবসেবায় ব্রতী স্বার্থহীন এই মানুষ।