কুড়িগ্রাম শহরের পাইকপাড়ায় আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ডাম্পিং করছে কুড়িগ্রাম পৌরসভা
পক্ষ। আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উপদ্রবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর মেয়র সম্পুর্ণ বেআইনিভাবে আবাসিক এলাকায় আবর্জনার ডাম্পিং করছেন। তাকে অনুরোধ করেও সম্ভভ হয়নি।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকান্ডকে ‘অবিবেচনা প্রসূত’ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু এসবের পরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নিয়মিত আবর্জনা ডাম্পিং অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন কুড়িগ্রাম-মোগলবাসা সড়ক ধরে পাইকপাড়ার গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধের ঢালের গর্তে আবর্জনার ডাম্পিং করে কয়েকশ মিটারের বিশাল স্তুপ তৈরি করা হয়েছে। সড়ক ও আবর্জনার স্তুপ একই সমতলে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে ওই স্থান দিয়ে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। স্তুপে মাছির গুনগুন। কয়েকটি কুকুর আবর্জনা ঘেঁটে নিজেদের খাবার উপযোগী উচ্ছিষ্ট খুঁজছে। নাকে কাপড় গুঁজে পথচারীদের পথের ওই স্থান দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ঢালের নিচের খালের পানিতে পড়া
আবর্জনার পচা গন্ধে স্তুপের পাশে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়।
ময়লার স্তুপ বরাবার সড়কের উভয় পাশে বেশ কিছু বসতি। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গন্ধতো আছেই। মশা আর মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকতে পারি না। বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ লাগি আছে। ময়লার স্তুপে আসা কুকুর প্রায় সময় আমাদের পোষা ছাগলকে কামড় দেয়। এখানে তো ময়লা ফেলার জায়গা না। মেয়র ক্ষমতার জোরে ময়লা ফেলছে।’
এলাকাবাসী অনেকে বলেন, ‘দুর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। শিশু-বয়স্ক সবাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। মাছির যন্ত্রণায় খেতে বসা যায় না। খাবারেতো বটেই, খাবারের সময় মাছি গিয়ে মুখেও পড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই। আবাসিক এলাকায় কোন বিবেচনায় এভাবে ময়লা ফেলে তা আমাদের বুঝে আসে না। আমরা এলাকাবাসী এখান থেকে আবর্জনার স্তুপ অপসারণ চাই। দুর্গন্ে বসবাস করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভা সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। মেয়র আমাদের এলাকার বাসিন্দা। তিনি যদি এসব না দেখেন তাহলে কার কাছে যাবো!’
পাইকপাড়ার বাসিন্দা ও শহরের এমএ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন ফারুক বলেন, ‘ মানুষকে স্বাস্থ ঝুঁকিতে ফেলে আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ডাস্পিং করা পৌর কর্তৃপক্ষের হটকারীতা। জায়গাটিও পৌরসভার নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় মেয়র তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবর্জনার স্তুপ তৈরি করে এলাকাবাসীকে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন। পৌরসভা, পাউবো ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। কুড়িগ্রাম নদী মাত্রিক এলাকা। এখানে ময়লা ফেলার মতো অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে ময়লা ফেলার প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের সাথে কথা বলবো।’
কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র মো.কাজিউল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকেই ওই স্থানে ময়লা ডাম্পিং করা হয়। আমরা ডাম্পিংয়ের জন্য জায়গা খুঁজছি। জায়গা পেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ডাম্পিং স্টেশন সরিয়ে নেওয়া হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মানুষের বসবাসের সমস্যা হলে সেখানে ময়লা ডাম্পিং করা উচিৎ নয়। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষেরই দেখা উচিত। জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’