চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহাষ্টমীতে মন্ডপে মন্ডপে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষের সমাগম
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহাষ্টমী অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। সকাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে চন্ডিপাঠে মুখরিত ছিল মন্ডপ অঙ্গন। চন্দনের সুবাস স্নিগ্ধ করে তুলে পরিবেশ। সকাল থেকেই পুণ্যার্থীরা আসতে থাকেন মন্দিরে।
পবিত্র চিত্তে দেবী মহামায়ার পায়ে অঞ্জলি প্রদান করেন। এই দিনে দেবীর সন্তুষ্টি লাভের আশায় একমনো চিত্তে দেবী দুর্গার আরাধনায় মগ্ন থাকেন ভক্তরা। প্রার্থনা করা হয় দেশ, জাতি, সংসার আর জাগতিক পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায়। একই চিত্র ছিল মহাষ্টমীতে জেলার সকল মন্ডপগুলোতে। কোনো কোনো মন্দিরে অধিক ভক্তের সমাগমের কারণে একাধিকবার অঞ্জলী প্রদান করতে হয়েছে। আগত ভক্তরা জানান, মহামায়ার এই আগমনের মধ্যদিয়ে বিদায় হবে সকল অশুভ।
অশান্ত পৃথিবীতে যেন শান্তি ফিরে আসে সেই কামনাই ছিলো মহাষ্টমীতে দেবীর কাছে। রোববার ছিল মহাষ্টমী, শারদীয় দূর্গাপূজার আকর্ষনীয় এবং জাকজমকপূর্ণ দিন। সকালে মন্ডপে মন্ডপে চলছিল চন্ডী পাঠ, ঢাকের বোল, মন্ত্র, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি, অঞ্জলি, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপন্ড দীপ সব মিলিয়ে প্রতিটি মন্ডপেই অন্যরকম পরিবেশ। দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় উৎসবের তৃতীয় দিনে দেবীর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন সকলেই। উৎসবের সঙ্গে মিল রেখে সবাই নতুন নতুন পোশাক পড়ে আসেন প্রতিমার পায়ে অঞ্জলি দিতে। মাটির বাসনে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বাসহ ফলমূল দিয়ে সাজানো হয় ভোগ।
সকাল পৌনে ৯ থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে দুর্গা দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা, এরপর বিকেলে তিথী অনুযায়ী শুরু হয় সন্ধিপূজা। এদিকে, সকাল ৮ টা থেকে বারঘরিয়া বাইশপুতুল সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে ভক্তরা নিয়ে আসতে থাকেন ভোগ। আয়োজকরা জানান, এবার মন্ডপে ভক্তদের উপস্থিতি থাকায় উৎসবের আমেজ এবং আরতিতেও ভীড় ছিল। পূজো মন্ডপে বিকেলের পর থেকে রাত পর্যন্ত জেলার আশপাশসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা দর্শন করেন। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানান, বিকেল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত মন্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটছে। মন্দিরগুলো তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে বিশেষ প্রাথর্নার আয়োজন করা হয়।
জেলা শহরের বড় ইন্দারা এলাকার প্রতাপচন্দ্র দাস দেবোত্তর দূর্গামন্দিরের পুরোহিত ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি বলেন, মহাষ্টমীতে মায়ের কাছে প্রার্থনার জন্য অনেক ভক্তের সমাগম ঘটে। অপশক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সবাইকে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দিবেন। সকল ভেদাভেদ ভূলে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে। অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের উপকন্ঠ বারঘরিয়ায় পালন করছে রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে সবচাইতে বড় ২২টি মূর্তি নিয়ে বাইশপুতুল দূর্গাপূজা। বারঘরিয়া বাইশপুতুল সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রী মৃণাল কান্তি পাল জানান, আনুমানিক ১৭০৫ সাল হতে এ পূজাটি বংশানুক্রমিকভাবে হয়ে আসছে।
এ পূজাটি অনুষ্ঠিত হতো চৌডালা কেন্দ্রীক। এর ইতিহাস রয়েছে, একসময় বন্যা হয়েছিল, বন্যার সময় এলাকাটি প্লাবিত হওয়ায় মায়ের সেই কাঠামোটি ভাসতে ভাসতে বারঘরিয়া এলাকার নদীর ঘাটে চলে আসে। কথিত রয়েছে, পূর্ব পুরুষদের স্বপ্নে দেখায় এখানে এ পূজাটি করতে হবে। আজ অবধি পূজাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২২ টি মূর্তিতে বিশাল আকৃতির এবং প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনের জন্য অজ¯্র দর্শনার্থীর আগমন ঘটে থাকে এ মন্দিরে। এছাড়া উৎসবকে ঘিরে মন্দিরের আশেপাশে গ্রামীণ মেলাও বসেছে।