চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিগ্রাম এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে আধুনিক কসাইখানা, থাকবে না দুর্গন্ধ, বর্জ্য থেকে হবে জৈব সার। অন্যদিকে স্থানীয় জনসাধারণ এ কসাইখানা নির্মানের বিরোধিতা করছেন। স্থানীয় জনসাধারণ এর দাবি দুটি হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় এ কসাইখানা নির্মাণ নেহাতই অন্যায়। এছাড়া মুল রাস্তাটি মাত্র ১০ ফিট এবং দুই পাশে গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন। কসাইখানাটি অন্যত্র স্থাপন করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হচ্ছে আধুনিক কসাইখানা। পশু জবাই বাদে বাকি সকল কাজ হবে হাতের স্পর্শ ছাড়াই। মেশিন দিয়ে কাটা হবে পশুর দেহের বিভিন্ন অংশ। এমনকি আধুনিক এই কসাইখানায় থাকবে না কোন দুর্গন্ধ। এছাড়াও পশুর বর্জ্য থেকে তৈরি করা হবে জৈর সার, যা ফসলী জমিতে ব্যবহার করতে পারবেন কৃষকরা। কসাইখানা ব্যবহারের সুযোগ থাকবে পারিবারিক অনুষ্ঠানে জন্য জবাই করা পশুর মাংশ কাটতেও।
জানা যায়, বর্তমানে জেলা শহরের বালিগ্রাম এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার একটি ১৯৯৭ সালে নির্মাণ করা কসাইখানা রয়েছে। যেখানে আবাসিক এলাকা হওয়া স্বত্বেও খোলা জায়গায় পশু জবাই করাসহ মাংশ করার যাবতীয় কার্যক্রম করা হয়। এমনকি গরু-ছাগলের বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলে রাখার কারনে দুর্গন্ধ ছড়ায় বালিগ্রাম এলাকায়। পাশাপাশি এই কসাইখানার কারনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এই এলাকার দুইটি হাসপাতালের রোগী, স্বজন ও দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানেই নির্মাণ করা হবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই কসাইখানা।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণীসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণীসম্পদ পরিষেবা বিভাগ। ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৫ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে আধুনিক কসাইখানা। নির্মাণকাজ চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শুরু হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত।
প্রাণীসম্পদ বিভাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগের পুরাতন কসাইখানার জায়গায় নির্মাণ করা হবে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কসাইখানা। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্পটি। তবে স্থানীয় কিছু মানুষের ভুল বোঝাবুঝি ও বাধার কারনে শুরু হয়নি প্রকল্পের নির্মাণকাজ। এমনকি কাজ শুরু করতে না পেরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছে প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারাদেশে মাত্রা ২০-২২টি এমন আধুনিক কসাইখানা নির্মানের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পুরাতন কসাইখানার জায়গায় নতুন ও আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প একটি। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও এখানে থাকবে অত্যাধুনিক সকল প্রযুক্তির ব্যবহার। শুধুমাত্র পশু জবাই ছাড়া বাকি সকল কাজ করা হবে হাতের স্পর্শ ছাড়াই। এমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থাকবে উন্নত ব্যবস্থাপনা। এখন যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ হলে তা থাকবে না। এর বিপরীতে পশুর বর্জ্য থেকে হবে জৈব সার।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে কিছু লোকজন কাজে বাধা দেয়ার কারনে নির্মাণকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে না পেরে উল্টো প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছে। তবে আশা করি, খুব শীগ্রই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার থাকায় এর ফলে কোন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে না বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বর্তমান কসাইখানার নৈশপ্রহরী মো. মানজুর আলী জানান, খুবই ভালো একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। এখানে একসময় মলমূত্র ও ময়লা-আর্বজনা ফেলার ভাগার ছিল। পরে ১৯৯৭ সালে সেখানে কসাইখানা নির্মাণ করা হয়। এই কসাইখানার জন্য অনেক পরিবেশ দূষন হয় এই এলাকার। আধুনিক কসাইখানা হলে এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বালিগ্রাম এলাকায় মোট ৭৮ দশমিক ২৫ শতক জমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার। পরবর্তীতে কসাইখানার পাশে চক্ষু হাসপাতাল, হার্ট ফাউন্ডেশন ও একটি মাদরাসা নির্মাণের জন্য জমি দান করে পৌরসভা। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতক জায়গায় রয়েছে পুরাতন কসাইখানাটি। ১৯৯৭ সালে এখানে নির্মান করা হয় কসাইখানা। পরে সেখানে ২০২২ সালে পরিবেশবান্ধব কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যা বাস্তবায়ন করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনীন ফাতেমা জিনিয়া বলেন, আগের যে কসাইখানাটি রয়েছে তাতে ওই এলাকার পরিবেশ দূষনের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। যুগ যুগ ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার কসাইখানাটি। সেখানেই আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। আধুনিক কসাইখানায় সকল বর্জ্য অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে রিসাইকেল করে জৈব সার তৈরি করা হবে। সরকারের এমন উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশীদ জানান, সরকার যে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এতে কোনরকম পরিবেশ দূষণ হবে না। এটি সম্পূর্ণরূপে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে কাজ করবে। আমরা চাই, কসাইখানার নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে জরাজীর্ণ যে কসাইখানাটি রয়েছে, এর পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। তবে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে ঢাকা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শনে আসে। যেহেতু সেখানে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাজ করা হবে, তাই এর ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা আব্দুল হাকিম জানান এলাকায় একটা উচ্চ বিদ্যালয়,আবাসিক এলাকা ও দুটি হাসপাতাল থাকায় রুগী সাধারণ বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হবে। কাজেই কসাইখানাটি খালঘাট এলাকায় করা হলে সকল পক্ষের উপকার হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এম পি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বলেন পৌরসভার জায়গাতেই গড়ে উঠেছে হাসপাতাল এবং উক্ত এলাকায় নির্মাণ হবে আধুনিক মানের কসাইখানা। এতে ঐ এলাকার জনসাধারণ উপকৃত হবে এবং কাজের পরিধি বাড়বে। তিনি কসাইখানা নির্মাণে সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।