জ্যাকবের আরেক স্থাপত্যশৈলী স্থাপনা; চরফ্যাশনে পরিবেশবান্ধব ও খাসমহল মসজিদের উদ্বোধন
ভোলার চরফ্যাশন জ্যাকব টাওয়ার সংলগ্ন বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব ও স্থাপত্যশৈলী মসজিদ 'চরফ্যাশন কেন্দ্রীয় খাসমহল জামে মসজিদের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে'।
শুক্রবার দুপুরে জেলার সহস্রাধিক আলেম-ওলামা ও ইমামদের নিয়ে এই মসজিদের উদ্বোধন করেছেন ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি।
উদ্বোধনী দিনে চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক মসজিদের ইমামসহ প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি আলেম, ওলামা ও মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রায় ৬ শতাধিক নারী নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে। ভূগর্ভস্থ ফ্লোরসহ চারতলা বিশিষ্ট এই মসজিদের আয়তন ৫৩ হাজার ২ শত বর্গফুটের। এই মসজিদে এক সাথে সাড়ে ৪ হাজার মুসল্লিদের নামাজের সুব্যবস্থা রয়েছে। নারীদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৫ শত জন নারীর নামাজের সুব্যবস্থা রয়েছে।
একসাথে ২ শত জনের অজু, গোসল এবং টয়লেটের অত্যাধুনিক সুব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে মসজিদের অভ্যন্তরে ইমাম মুয়াজ্জিন ও খাদেমগণের থাকার সুব্যবস্থা। এটি বাংলাদেশে নির্মিত সর্বপ্রথম গ্লাস গম্বুজ মসজিদ। দিনের স্বচ্ছ আলোতে নামাজ পড়া যায়। ফলে দিনের বেলায় কোন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। মসজিদের বাইরে শ্বেত পাথরের দীর্ঘ লম্বা সুউচ্চ ধাপের সিঁড়ি যেন মুসল্লিদের মসজিদে আগমনে অনায়াসে আকৃষ্ট করছে। মসজিদের প্রতিটি তলা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অনবদ্য প্রয়াস অবাক করার মতো। মসজিদের পাশে অবস্থিত জ্যাকব টাওয়ারের চূড়ায় লাগানো মাইকে যখন আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা যায়, তখন দূরদূরান্তের মুসল্লিগণের মাঝে ধর্মীয় অনুভূতির আমেজে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মসজিদ পানে আসতে আকৃষ্ট করছে।
শৈল্পিক ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যের এই মসজিদ বাংলাদেশে বিরল। উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় সুউচ্চ ‘জ্যাকব টাওয়ার’ এর পাশে অবস্থিত এই মসজিদ। পরিবেশ সুরক্ষা ও আবহাওয়া উপযোগী করে উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি। মসজিদের দেয়ালে সিরামিক ইটের নিপুণ গাঁথুনির মধ্য দিয়ে দিয়ে প্রবেশ করছে প্রকৃতির নির্মল বাতাস। মসজিদের কাঁচের গ্লাসের গম্বুজ ভেদ করে দিনের আলো মসজিদের ভিতরে ছড়াচ্ছে। এছাড়া মসজিদের ভিতর-বাইরে রয়েছে নান্দনিক রং বেরংয়ের এলইডি লাইটের আলোক রশ্মি। প্রকৃতিবান্ধব নির্মাণ শৈলীর এই মসজিদ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইবাদতে আকৃষ্ট করবে।
জানা গেছে, মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে টানা প্রায় ৬ বছর সময় লেগেছে। মসজিদের বাইরে সিরামিক ইটের গাঁথুনিতে সাজানো চত্বরটি দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের খ্যাতিমান ডিজাইনার ভোলার কৃতি সন্তান স্থপতি কামরুজ্জামান লিটনের শিল্প সৌকর্যের অপরূপ স্থাপনা এটি।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান বলেন, ২০১৮ সালে মসজিদের প্রথম নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদ নির্মাণে জাতীয় সংসদ ভবনে ব্যবহ্নত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সাদা ফেয়ার ফেস সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে রয়েছে সাদা ফেয়ার ফেস পলেস্তার আবরণ। যার স্থায়ীত্ব প্রায় শতবছর। এখানে রয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য্য বর্ধনে ফোয়ারা আর দৃষ্টিনন্দন সজ্জিত ফুলের বাগান আর বিভিন্ন রংয়ের লাইটিং।
পৌর মেয়র মো. মোরশেদ বলেন, বাংলাদেশের নান্দনিক মসজিদ এটি। প্রাকৃতিক পরিবেশে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামাজ পড়তে পারবেন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ ও চরফ্যাশন পৌরসভা এবং সাংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ব্যক্তিগত অর্থায়নে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উদ্বোধন শেষে মসজিদ নির্মাণ ব্যবস্থাপনাকারী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি বলেন, আমার জীবনে স্বপ্ন ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের। আজ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।