প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারতীয় এজেন্টদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কানাডা ভারত থেকে ৪১ জন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করেছে বলে কানাডীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন।
এছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে অটোয়া প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের ভূমিকা ছিল বলে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ সামনে আনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক গুরুতরভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
নিহত নিজ্জার নয়াদিল্লির চোখে ‘সন্ত্রাসী’ হলেও তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত।
এই পরিস্থিতিতে চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতে কানাডার ৪১ জন কূটনীতিককে সরিয়ে নিতে বলে ভারত। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে সেসময় দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, ১০ অক্টোবরের পর থেকে যাওয়া কূটনীতিকদের কূটনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাহার করার হুমকিও দেয় ভারত।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, শুক্রবারের মধ্যে দেশ না ছাড়লে ভারত একতরফাভাবে কূটনীতিকদের আনুষ্ঠানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপটি অযৌক্তিক ও নজিরবিহীন এবং স্পষ্টভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারত থেকে তাদের (কূটনীতিকদের) সরিয়ে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা কূটনৈতিক নিরাপত্তার নিয়ম লঙ্ঘন করতে দেই, তাহলে পৃথিবীর কোথাও কোনও কূটনীতিক নিরাপদ থাকবে না। তাই এই কারণে, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কোনও পদক্ষেপ নেব না।’
ভারতে কানাডার ৬২ জন কূটনীতিক ছিল এবং ৪১ জনকে সরিয়ে নেওয়ার পর কানাডার এখন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ২১ জন কূটনীতিক রয়েছেন। এছাড়া ভারত ত্যাগ করা ৪১ জনের সঙ্গে তাদের পরিবারের আরও ৪২ জন সদস্যও চলে গেছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।
ভারত অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি।