দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেল এক অনুভূতির নাম, এক ভালোবাসার নাম। রাসেল দেশের আনাচে-কানাচে এক মানবিক সত্তা হিসেবে সবার মাঝে বেঁচে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা-২১৭, গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের উন্নয়ন কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ও সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম ও পৈশাচিক ঘটনা হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত গভীর শোকের সঙ্গে আমরা স্মরণ করি। এ দিন ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি শিশুপুত্র শেখ রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নরপিশাচরা নিষ্ঠুরভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি স্নেহের ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এ দিনে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যুকালে সে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
তিনি আরও বলেন, তাকে না মারার জন্য খুনিদের কাছে আর্তি জানিয়ে বারবার বলেছিল ‘আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও’। সে দিন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র রাসেলের এই আর্তচিৎকারে স্রষ্টার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি খুনি পাষাণদের মন। এই নিষ্পাপ শিশুকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। তার অকাল মৃত্যুর শোককে আমাদের শক্তিতে পরিণত করতে হবে।
‘কারাগারের রোজনামচা’তে শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। কী উত্তর ওকে আমি দেব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।’ ও কি বুঝতে চায়! কী করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।”
‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’
শেখ রাসেল ছিলেন ভীষণ দুরন্ত। তাঁর দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল বাইসাইকেল। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ছাড়াই সাইকেলে করে স্কুলে যেতেন পাড়ার আর দশজন সাধারণ ছেলের মতো। বিখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসা স্মৃতিকথায় রাসেল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কদিন বিকেল পাঁচটার দিকে শাঁ করে ৩১ নম্বরের অপ্রশস্ত রাস্তা থেকে ৩২ নম্বরে ঢুকেই আমার সামনে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ ছেলেটি।...অতঃপর সাইকেলে উঠে লেকপাড়ে উধাও হলো শৈশবের শেষ প্রান্তের ছোট্ট ছেলেটি। ...বিকেলে লেকের পূর্বপাড়ে এমনি করে চক্কর মারত। মধ্যবর্তী ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পূর্বপ্রান্তের সাদা একটি দালান পর্যন্ত সাইকেলারোহীর দৌড়ানোর সীমানা। ...এদিকে ৩২ নম্বরের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন স্নেহময়ী মা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন দুষ্টু ছেলেটির সাইকেল-পরিক্রমা যেন সীমাবদ্ধ থাকে।’
রাসেল যদি বেঁচে থাকত, নিশ্চয়ই একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত। প্রিয় রাসেলের বিদায়ী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন। আমিন।