মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, অ্যামুনিশন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, বিভিন্ন ভিডিও ও এডিট করা ছবি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার আবু হানিফের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়। এই এলাকা থেকে সে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বলেও র্যাব জানায়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আবু হানিফ দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আসছিল। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসছিল সে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করে আসছিল সে। এছাড়াও আবু হানিফ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।
তিনি বলেন, সে প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতো। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন মোবাইল নম্বর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে মোবাইলে সেভ করতো। সে নিজেই অথবা তার সহযোগীদের মাধ্যমে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতো। প্রতারণার বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে বসাতো। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তার টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের পাঠাতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আবু হানিফ এইচএসসি পাস। তবে সে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে বলে মিথ্যা পরিচয় দিতো। সে ২০০৮ সালে মোটরপার্টসের ব্যবসার করতো। দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেটকার রয়েছে। সে ঢাকার নাখালপাড়া এবং ধানমন্ডি এলাকায় দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার- প্রচারণা চালাতো।
২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করত। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনীতিবিদ, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পরিচিত হতো। পরে সুসম্পর্ক তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অফিস বা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে রাখতো। প্রতারণার কাজে এই ছবিগুলোই ব্যবহার করতো। ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি, সেমিনারে অংশগ্রহণ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময় ভ্রমণের ছবি পোস্ট দিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। কোন কোন টিভি চ্যানেলেও সে গিয়েছে।
মঈন বলেন, এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসা, প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পত্তির মালিক হওয়া, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগও করেছে সে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা জানতে পেরেছি ১০-১২ জনকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে হানিফ। ২০১৫ সালে হানিফ যে ব্যক্তির পিএস হিসেবে কাজ করতো তাকেও মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সে। এভাবে সে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে।