রাজধানীর পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কার করছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে আবাসিক হোটেলগুলোতে তল্লাশি শুরু করেছে পল্টন ও মতিঝিল পুলিশ থানা পুলিশের সদস্যরা। সেখান থেকে অবশ্য কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলুকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পাশাপাশি আরও কয়েকজন নেতাকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করা হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাত সোয়া ১২টার দিকে এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদকে তাঁর শেওড়াপাড়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাফরুল থানা–পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে বলে জানা গেছে। তবে যোগাযোগ করা হলে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুকুল আলম বিষয়টি অস্বীকার করেন। এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কলের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সভাপতি আটক যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী সোহেলকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করেছে পুলিশ।
রুহুল কুদ্দুস দুলুসহ আরও দুই–তিনজনকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযানকারী ডিবি পুলিশের দলে থাকা এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, এক সঙ্গে আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান চলছে।
তবে বিএনপির বুধবারের জনসমাবেশকে ঘিরে এই অভিযান কি না সে প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদায় ওই কর্মকর্তা।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের ব্যক্তিগত সহকারী রনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তবে এখন ডিবি পরিচয়ে কেন তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো সে বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ক্যানসার আক্রান্ত। কিছু দিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরেছেন। প্রতি সপ্তাহে কেমোথেরাপি নিতে হয়। এ ছাড়া নিয়মিত বেশ কয়েকটি ওষুধ খেতে হয়।
এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র বলছে, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ব্যানার ও বিলবোর্ড ছিঁড়ে ভেঙে ফেলে একদল দুষ্কৃতকারী। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে ওইসব ব্যানার তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দুটি রাজনৈতিক দলেই কিছুটা উত্তেজনা আছে। এ অবস্থায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি'র জনসমাবেশকে নস্যাৎ করতে নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র কৌশলেই কোনো কাজ হবে না।’
রিজভী বলেন, ‘সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বুধবারের জনসমাবেশ সফল হবে।’
সঃবাদ সম্মেলনে আটক নেতাদের তালিকা দেন রিজভী, তাঁরা হলেন:
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি,বিএনপি।
আবুল কালাম আজাদ, আহবায়ক, তাঁতি দল, কেন্দ্রীয় কমিটি।
যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজমুল আলম নাজু।
গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নেওয়াজ চৌধুরী শাওন ও কালীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দলের তোফাজ্জল হোসেন মফা, কালিয়াকৈর স্বেচ্ছাসেবক দলের সরকার তুহীন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সেলিম সহ ৫ জন৷
রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল-আমীন ও পবা উপজেলা কৃষকদলের নেতা মো. রবিউল ইসলাম।
দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজা।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী সোহেল।
আফজাল হোসেন পলাশ, ১ম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর জেলা বিএনপি। সূত্র: আজকের পত্রিকা