দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা-অনিশ্চয়তা কাটেনি। বরং দিন দিন তা আরও জোরালো হচ্ছে। এর মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো শুরু করবে। এ জন্য আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠিও দিয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। চিঠির অনুলিপি পুলিশের মহাপরিদর্শককেও (আইজিপি) দেওয়া হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যাবতীয় নির্বাচনী মালামাল কেনার টেন্ডার শেষ হয়েছে। মালামালগুলো আসতেও শুরু করেছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী সপ্তাহ থেকে এগুলো জেলায় জেলায় পাঠানো শুরু হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকারের অতিগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী মালামাল ইসি সচিবালয়ের ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় থানা নির্বাচন অফিসে সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব অফিসের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। জনস্বার্থে ও সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইসি সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের অফিসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সম্প্রতি ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও আগামী সংসদ নির্বাচনে এসব অফিসে হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় তাঁরা ২০১৪ সালে ইসির বিভিন্ন অফিসে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের ঘটনার কথা ইসিকে স্মরণ করিয়ে দেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে কমিশন। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলছে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ। আগামী ২ নভেম্বরের মধ্যে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার জন্য মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচনী কেনাকাটার কাজও প্রায় শেষ। সব মালামাল ইসিতে আসতে শুরু করেছে। আর প্রথমে তিনবার টেন্ডার দিয়েও স্ট্যাম্প প্যাড কিনতে পারেনি ইসি। যদিও পরে একটি কোম্পানিকে এই কাজ দেওয়া হয়েছে। তাই এগুলো ইসিতে পৌঁছাতে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আর ব্যালটসহ অন্যান্য ছাপার কাজ বিজি প্রেসকে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এখন থেকে সংসদ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের সব অফিসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবকেও চিঠি দিয়েছে কমিশন।
ইতিমধ্যে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এটি চলবে নভেম্বর মাসজুড়ে। তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা মাঠপর্যায়ে ৯ লক্ষাধিক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। গতকাল শেষ হয়েছে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণ। দ্বিতীয় ধাপে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সূত্র: আজকের পত্রিকা