শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে ব্যতিক্রমী প্রতিমা তৈরি হয়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। এমন শৈল্পিক কারুকাজে মুগ্ধ হচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
কলারোয়ার মুরারীকাটি উত্তরপাড়া পালপাড়া শারদীয় দুর্গাপূজা মন্দিরে তৈরি হয়েছে চিনিগুঁড়া ধানের সুনিপুণ বিন্যাসে প্রতিমা। ইতোমধ্য শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। সোনালী বর্ণের এ প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান।
শিল্পীর শৈল্পিক হাতের নান্দনিক ছোয়ায় তৈরি দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুরের প্রতিমা দেখে মনে হচ্ছে যেন সোনায় মোড়ানো। লাখ টাকার খরচে প্রতিমা তৈরিতে সময় লেগেছে এক মাস। শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগেই দর্শনার্থীদের ভিড় জমেছে এখানে। দর্শনার্থীরা এমন ভিন্ন পন্থায় তৈরি প্রতিমা দেখে বেশ আনন্দিত।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলায় সাতটি উপজেলায় এবার ৬৬৫টি পূজা মণ্ডপে পূজা উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখার জন্য জেনারেটর রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এদিকে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ষষ্ঠীর আগেই প্রতিমার কাজ সম্পন্ন করতে হবে তাদের। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসব।
চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে আকর্ষণীয় এই প্রতিমা তৈরির কারিগর হলেন প্রহ্লাদ বিশ্বাস। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে প্রতিমা তৈরির কার্যক্রম শুরু করেন। এর মধ্যে অক্টোবর মাসের ১ তারিখে মোটামুটি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছেন। চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে ১৮টি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লেগেছে এক মাস। এখানে রং তুলির কাজ চলবে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত।
প্রহ্লাদ আরও বলেন, কার্তিক, গনেশ সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিসুরসহ ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে বাঁশ, কাঠ, পাট ও মাটি দিয়ে কাঠামো করা হয়েছে। তৈরিকৃত কাঠামোতে নকশি পাড় বসানোর পর একটি করে বসানো হয়েছে চিনিগুঁড়া ধান। কিছু কিছু অংশে স্প্রে করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে বিভিন্নস্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসছেন এবং তারা এমন আকর্ষণীয় প্রতিমা দেখে প্রশংসা করছেন।
মুরারীকাটি পালপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জীবন কুমার ঘোষ বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে এই মণ্ডপে তারা পূজা উদযাপন করে আসছেন। ৪০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে ভিন্নতা রেখে চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার ভিন্নধর্মী ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রতিমা তৈরি করে আলোচনায় এসেছিলেন তারা। এ প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান। প্রতিমা তৈরিতে মোট ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। এবারের তৈরিকৃত প্রতিমা দেখতে দুর্গা উৎসবের আগেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন এবং তারা উপভোগ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর পাল বলেন, অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার তৈরিতে খরচ বেশি হলেও প্রতিমা দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়েছে। চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে জেলাতেই প্রথম এখানে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। কারিগর একটা করে ধান সুনিপুণভাবে থরে থরে সাজিয়ে প্রতিমাকে সুন্দর করে তুলেছেন।
একই এলাকার মিলন বিশ্বাস বলেন, দুর্গা উৎসব শুরু হওয়ার আগেই পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মুরারীকাটি পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা হয়েছে। সেখানকার তৈরিকৃত প্রতিটি প্রতিমা দেখে মনে হচ্ছে যেন সোনায় মোড়ানো। এত সুনিপুণ কারুকার্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
সাতক্ষীরার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, প্রতি বছর এ জেলাতে বাঁশ, বেতসহ নানা জিনিস দিয়ে আকর্ষণীয় প্রতিমা তৈরি করা হয়। তবে এবার কলারোয়ার মুরারীকাটি পাল পাড়ায় তৈরিকৃত প্রতিমা সর্বাধিক আকর্ষণীয় করা হয়েছে। এ প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান। এমন ভিন্নধর্মী প্রতিমা তৈরি জেলায় এই প্রথম। তাছাড়া ইতোমধ্যে জেলার সব পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। ষষ্ঠীর আগেই শিল্পীরা তাদের কাজ সম্পন্ন করবেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, জেলার সব পূজা মণ্ডপগুলো সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে একই সঙ্গে সেখানে স্বেচ্ছাসেবী ও আনসার ব্যাটালিয়ন থাকবে। পূজা মণ্ডপে প্রতিটা স্বেচ্ছাসেবীর জন্য রেজিস্টার্ড সংযুক্ত করা হবে। দুর্গা উৎসব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সেখানে প্রশাসনের নজরে থাকবে। সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে আনসার, গ্রাম পুলিশসহ একাধিক দল টহলরত থাকবে।