মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাশার বলেন, খুতবা পড়া শেষ পর্যায়ে আমার বরাবর প্রথম সারিতে শার্ট প্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোক এসে বসেন। ইকামত শেষে নামাজে দাঁড়ানোর সময় মুয়াজ্জিন ওই ভদ্রলোককে একটু সরতে বলেন। এরপর আমি নামাজ পড়াই। নামাজ শেষে আমি মসজিদ থেকে বের হলে ওই ভদ্রলোক আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে মসজিদের দক্ষিণে সরকারি পুকুর পাড়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত একজন আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি ওনাকে চেনেন? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন উনি আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। আমি তাৎক্ষণিক বললাম, স্যার আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি। তখন ইউএনও স্যার উত্তেজিত হয়ে বললেন, কোনো কথা নেই। তোকে এখন পানিতে চুবাবো। তুই কত বড় মাওলানা হয়েছিস, তোর ইন্টারভিউ নেব। তখন তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ ও মেম্বার গোলাপ হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল করে দ্রুত পুকুর পাড়ে আসতে বলেন। এরপর তিনি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে আমাকে কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পেরেছি। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় দিতে পারিনি।
চেয়ারম্যান-মেম্বার পুকুর পাড়ে আসার পর ইউএনও স্যার আমাকে প্রশ্ন করেন, আমাকে সরতে বললেন কেন? কোন কিতাবে আছে মুয়াজ্জিন ইমামের বরাবর দাঁড়াতে হবে? তখন স্যারকে বললাম, ইমাম যদি কোনো কারণে নামাজ পড়াতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে ইমামের বরাবর যিনি থাকেন তাকে ইমামের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাছাড়া আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি।
তখন তিনি বলেন, আমি নাকি অহংকারী? আমি বললাম স্যার, আমরা অহংকার করে আপনাকে সরতে বলিনি। তখন স্যার ক্ষুব্ধ হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে পানিতে চুবাবেন বলেন। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলেন, আমি যখন বলব তখন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কমিটির লোকদের আমার অফিসে নিয়ে আসবেন। উত্তরে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এমনি গেলে যাবে, না গেলে ধরে নিয়ে আসব। প্রায় দুই ঘণ্টা জেরার পর আমি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে পুকুর পাড় থেকে পাকা সড়কের দিকে গেলে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় ভাটরা গ্রামের জহিরুল ইসলাম নামের একজন আমাকে বলেন, হুজুর আপনি ভালো মানুষ। আপনাকে আমরা অনেক সম্মান করি। ইউএনও স্যার এবং চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে পাঠাইছে। কালকে থেকে আপনি আর মসজিদে আসবেন না। আসলে অপমানিত হবেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি শুক্রবার অন্য মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমাদের মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু বিকেলে শুনেছি জুমার নামাজের পরে ইমামের সঙ্গে নির্বাহী কর্মকর্তার সমস্যা হয়েছে।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, নিয়মিত মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে আমি ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। খুতবায় ইমাম সাহেবের কিছু কথা উস্কানিমূলক মনে হয়। আমি বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করি। এরপর আজ (শনিবার) বিকেলে জানতে পারি, ইমাম সাহেবকে মসজিদে যেতে চেয়ারম্যান বারণ করেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর চেয়ারম্যান আমাকে জানান রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য ওই ইমাম জেল খেটেছেন। আমি বিষয়টি মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে বলি। তদন্তে ইমাম সাহেব দোষী প্রমাণিত হতে পারেন, আবার নাও পারেন। তদন্ত চলাকালে উনাকে চাকরিচ্যুত করা ঠিক হয়নি।
কাতারে দাঁড়ানো নিয়ে ইউএনও বলেন, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এটা কারা ছড়াচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না।