দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হতদরিদ্র মানুষ পেট ভরে দুবেলা খেতে পারে না, অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকেরা উন্নয়নের গালগল্প করে দেশটিকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে।’
মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ, এক বছরের মাথায় ৬৭ শতাংশ কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা, লাগামহীন দুর্নীতি, অর্থপাচারে দেশের অর্থনীতি ‘ফোকলা’ বা ‘ফাঁপা’ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা একদম পুরোপুরি একটা হলফ, ফাঁপা একটা বিষয়। অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে পুরো সম্পদ তারা লুট করে নিয়ে চলে গেছে। সেই সম্পদ বিদেশে নিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকা ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত আমাদের জানামতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাত থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, একেবারে লুট।
তিনি বলেন, এখানে এই লোকগুলোর (ক্ষমতাসীনদের) কোনো নতুন বিনিয়োগ নেই, কোনো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। যার ফলে দারিদ্র্য দারিদ্র্যই থেকে যাচ্ছে এবং মানুষের যে আয়ের ফারাকটা, বৈষ্যমটা যেটা সেটা দিনে দিনে বাড়ছে। এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখন একটা পয়েন্ট অব রিটার্নে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সিপিডি বলছে, এখানে দুটি সোসাইটি তৈরি হয়ে গেছে… একটা হচ্ছে খুবই বড়লোক শ্রেণি যারা বিদেশে যায়, পোশাক-আশাক…, দামি গাড়ি বিএমডব্লিউ, মার্সিটিজ এগুলোতে চড়ছে। অন্যদিকে এই গুলশানেই দেখবেন সিগন্যালগুলোতে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে অসংখ্য মানুষ তারা তাদের প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আর্থিক খাতসহ দেশে আইনের শাসন ও সার্বিক শৃঙ্খলার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে জবাবদিহি। যেহেতু বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই, তাদের হাতে আমাদের এই দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিচারব্যবস্থা কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহ্বান- আসুন বাংলাদেশে একটি সত্যিকার জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং দুঃসহ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের অবসান ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করি, তাহলেই ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যাংকিং সেক্টর তথা সামগ্রিক অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে টেকসই উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার শুধু রাজনীতিকে নয়, অর্থনীতিকেও পুরোপুরি ধবংস করেছে এবং তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, প্রতারণা করছে জনগণের সঙ্গে। জনগণ শুধু নয়, আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে সেই সংস্থাগুলোর সঙ্গেও তারা প্রতারণা করছে। এমন একটা ন্যারেটিভ খাঁড়া করেছে যে, বাংলাদেশ রোল মডেল হয়ে গেছে যে, থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিগুলোর ডেভেলপমেন্টের জন্য… বারবার এই কথাটা বলতে থাকে, জোর দেয় এবং বিভিন্ন সেতু, উড়ালসেতু, টানেল, মেট্রোরেল উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি বলতে চায় যে এটা উন্নয়নের দিকে চলে গেছে। আপনি দেখবেন যে, এটা আমার কথা নয়, আমি যদিও অর্থনীতির ছাত্র কিন্তু অন্যান্য যে অর্থনীতি বিষয়ক যেসব সংস্থা আছে যারা রিসার্চ করে, পড়াশুনা করে বলছে- এটা পুরোপুরিভাবে হলফ, ফাঁপা একটা বিষয়। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘দেশে টানা তিন মাস ধরে প্রবাসী আয় কমছে। ৪১ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে ছিল সর্বনিম্ন ১৩৪ কোটি ডলার। গত তিন বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বরে একক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি মাসে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকেরা।’