"রুখবো দুর্নীতি গড়বো দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ" এই শ্লোগানে কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জনসাধারণে স্বস্তি ফিরলেও বিশেষ করে জেলা প্রশাসন এর ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, ভূমি ও বিআরটিএ অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুনানিতে আলোচনার তুঙ্গে ছিলো জেলাজুড়ে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ দুর্নীতি। বুধবার (১১অক্টোবর) শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহিদ সুভাষ হলে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের অংশগ্রহণে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের সরাসরি অভিযোগ শুনেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। এ-সময় কিছু অভিযোগের সমস্যা সমাধান করার জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং অনুত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক। এছাড়া তদন্তে কোন অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
শুনানিতে জেলাজুড়ে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ,কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, বি.আর.টি.এ. সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সমাজসেবা অফিস, নির্বাচন অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং পৌরসভাসহ মোট ২৬ টি দপ্তরের ১০৯ টি অভিযোগ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে ৭৯ টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ শুনানির জন্য সেবা প্রার্থী জনসাধারণ সরাসরি উপস্থাপন করেছেন। উপস্থাপিত ৫৮ টি অভিযোগের মধ্যে ০২টি দুর্নীতির বিষয়ে কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধান করার জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ৫৬ টি অভিযোগের তাৎক্ষনিকভাবে সমাধান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান এর সভাপতিত্বে সকাল ১০টা থকে শুরু হওয়া এ গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদুক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, 'সরকারি পরিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই উক্ত গণশুনানির মূল লক্ষ্য। এছাড়া সুশাসনের মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও দুর্নীতি জিরো টলারেন্স করতে হবে এবং জনসেচতনতায় রুখে দিতে হবে এই দুর্নীতি।
পরে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সরকারি সেবা সে কোন মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোদ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।
এ-সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মো: আক্তার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ), দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, মোঃ মাহমুদ হাসান, পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার), কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বকুল।
এসময় দুদক সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সকল সরকারি দপ্তর প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে গণশুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কক্সবাজার।
এর আগে গণশুনানিতে জনসাধারণের সমাগমকল্পে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট, সরকারি অফিসের সামনে বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছে। ফলে এ গণশুনানির বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।