মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থা
চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছে
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে কৃষি, যা এ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১৫.৯৬% এবং ৪৭.৫% শ্রম শক্তি এ খাতে নিয়োজিত। এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তাসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা এখনও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল। 

বিবিএস ২০১৪-১৫ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ১০ লাখ এবং প্রতি বছর ২০ লাখ লোক জনসংখ্যায় যোগ হচ্ছে। ২০৪৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১.৩৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে হবে প্রায় ২২.৫ কোটি। এ বাড়তি জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ আবশ্যক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কৃষি তথা সার্বিক জীবনযাত্রার ওপর। 

ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার আধিক্য, আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত। জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি বিষয়, যা সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও মানুষের ওপর। পরিবেশ, মানুষ ও জলবায়ু অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। 

আমাদের কৃষির সাথেও পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে পরিবর্তিত পরিবেশে বদলে যাচ্ছে এ দেশের খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থা। কৃষিতে সূর্যের আলো, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতার মৌসুমভিত্তিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ফসলের ধরন, জাত, চাষ পদ্ধতি ও উৎপাদনশীলতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণে তারতম্য ঘটছে এবং এর প্রভাব পড়ছে ফসলের উৎপাদনশীলতার ওপর। এ কারণে দেশে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা। পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে এ দেশের জনগোষ্ঠীর পুষ্টিকর খাবার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জন্মলগ্ন ১৯৪৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাদ্য এবং কৃষিও বদলাবে। প্রতিপাদ্যটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী।

চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছে: বৈঠকে জীববৈচিত্র রক্ষা, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালেও প্রশ্ন তোলে সংসদীয় কমিটি। তারা জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প তেমন কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জলবায়ু তহবিল বরাদ্দ এবং এর গুণগত মান নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে।

তাতে বলা হয়, জলবায়ু তহবিল বরাদ্দে গুণগত মানের বদলে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি কাজ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘স্থানীয় জলবায়ু বিপন্নতা ও বরাদ্দের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে।’’

গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান: প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন’। তাতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারের ১০৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে মহানগরে তিনটি, পৌরসভায় ৯১টি ও জেলা পরিষদে ১৪টি প্রকল্পে বাজেট প্রায় ৩৫৪ কোটি টাকা। বিপন্নতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তহবিল বরাদ্দ হচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রভাব বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। যেখানে ঝুঁকি বেশি, সেখানে বরাদ্দ কম, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণে ‘পছন্দমতো প্রকল্প’ নিয়ে বরাদ্দ বেশি করায় ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হচ্ছে। এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় এসব প্রকল্পে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণের সম্মতি ছাড়া নিজেদের মতো করে প্রকল্প নিলে তার সুফল পাওয়া যাবে না। গবেষণা জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সম্পর্কে জানেন না; প্রকল্প এলাকায় তথ্যবোর্ড স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি এবং তথ্যবোর্ডে অপর্যাপ্ত তথ্য।

পরিবেশ বিজ্ঞানী ও জলবাযু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, ‘‘এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারপরও বরাদ্দ অর্থের অর্ধেকের বেশি কাজ হয় না। এর ২০ ভাগ হয় অপচয়, ২০ ভাগ যায় যারা প্রকল্প পাস করেন তাদের পকেটে, ১০-১৫ ভাগ চলে যায় ঠিকাদারসহ অন্যান্যদের পকেটে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আরো সমস্যা আছে। প্রকল্প গ্রহণে অভিজ্ঞ লোকের অভাব। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করা। আর প্রকল্প অনুমোদনকারীদের প্রভাবের কারণে সঠিক প্রকল্প নেয়া যায় না। এরকম অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্প এখন কাজে আসছে না। তারপরও আগের চেয়ে কাজ ভালো হচ্ছে। বাংলাদেশে অন্তত ছয়জন বিজ্ঞানী আছেন যারা বিষয়টি বোঝেন।’’

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এবার যারা কপ সম্মেলনে মিশর গেছেন, তাদের পর্যাপ্ত দক্ষতা নেই বলেও মনে করেন ড. আতিক রহমান।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণে এক হাজার ৫০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২২৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালের পর থেকে এই খাতে বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ কম-বেশি এরকমই।

এর বাইরে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি থেকে ৪৩টি প্রকল্পে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে ১১ কোটি ডলার অর্থ পেয়েছে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে ১০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে। আর সর্বশেষ আইএমএফের ৪.৫ বিলিয়ন ঋণের ১.৩ বিলিয়ন দেয়া হয়েছে জলবায়ু খাতে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। বিশ্বব্যাংকের হিসাব জানাচ্ছে, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন স্থায়ীভাবে। প্রতিদিন আসছে দুই হাজারের মতো। তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক ভোরের পাতা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]