প্রকাশ: সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৫২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের নগরকাটগড়াস্থ স্বামীর সংসার বিচ্ছিন্ন ভূমিহীন মালেকা বেগমের একমাত্র ঘরে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন ৩ বোনের পৃথক পরিবার।
জানা যায়, ঐ গ্রামের মৃত গেলনা শেখ-রেজিয়া বেগম দম্পত্তির ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মালেকা বেগম স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হন। এরপর তার ৪র্থ ছেলে হুমায়ুন লেখাপড়ার পাশাপাশি মা মালেকা বেগমের সঙ্গে ঢাকায় থাকে। মালেকা বেগম অন্যের বাসায় ঝি-এর কাজ করেন। মেঝো বোন শাহানাজ বেগম ও ছোট বোন শাহিদা বেগমও স্বামীর সংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে ৩ বোনই মা রেজিয়া বেগম মিলে একসঙ্গে অবস্থান করেন। শাহিদা বেগমের মেয়ে সুমনা আক্তার কাটগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে ও মালেকা বেগমের ছেলে হুমায়ুন বৈরাতি কলেজে অধ্যয়ন করছে। ৩ বোনই অন্যের বাড়িতে কাজ-কাম, বৃদ্ধা মা ভিক্ষাবৃত্তি করে অতিকষ্টে সংসার চালান। এরই ফাঁকে আশ্রয়ের জন্য শাহানাজ বেগম ও শাহিদা বেগম অন্যান্য মানুষের বাড়ির পিঁছনের পরিত্যক্ত ৩ শতক জায়গা খুবই কম দরে কিনে নেন। কিন্তু, বসবাসের জন্য ঘর-দরজা করতে পারেননি। বড় বোন মালেকা বেগমের সি ত (জমানো) টাকায় টিনের একটি চৌ-চালা ঘর ও সবাই মিলে একটি ছোট্ট চালাঘর তুুুুলেন। বেড়া দিতে না পারায় মানুষের পরিত্যাক্ত সাইনবোর্ড, প্যানা, বস্তা, পলিথিন, ছেড়া কাপড় ইত্যাদি দিয়ে কোনরকমে ঘিরা দিয়ে বৃদ্ধা মা, পৃথক পরিবারযোগ্য ৩ বোন একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন।
গত বছর বৃদ্ধা মায়ের মৃত্যু হলে পরিবারে ভিক্ষাবৃত্তির উপার্জন টুকুও বন্ধ হয়। এরপর চলতি বছরের ২ জুন আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে তাদের উদ্যম চালা ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে তাঁরা তা আর মেরামত করতে পারেননি। বর্তমানে মালেকা বেগম ঢাকায় অন্যের বাসায় ঝি-এর কাজ করছেন। শাহানাজ বেগম ও শাহিদা বেগম স্থানীয় কাটগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর সংলগ্ন রাস্তার ধারে চকলেট, চা, খিলিপানের ক্ষুদ্র দোকান করে দিনে ৫০/৬০ টাকা আয় করে তা দিয়েই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপত করেন। আওয়ামী লীগপন্থি দুর্দশাগ্রস্থ এ পরিবারের অবস্থান দেখতে হলে অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের ঘরবাড়ি ভেদ করে যেতে হয় (যা দেখেও সঠিক বর্ণনা দেয়া কঠিন)।
এব্যাপারে মালেকা বেগম, শাহানাজ বেগম, শাহিদা বেগমসহ স্থানীয়রা জানান, দুর্দিনগ্রস্থ পরিবারে উপার্জন ক্ষম কোন লোক নেই। স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। প্রত্যহ দোকান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলেনা। তাই, সারাবছর ধরে অভাব অনাটন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। কিছুদিন আগে সরকারীভাবে নির্মিত ঘর চেয়ে বিভিন্নস্তরে যোগাযোগ করেও ভাগ্যে তা মেলেনি। বর্তমানে ৩ বোনের পৃথক পরিবার একমাত্র ঘরে কোন রকমে বসবাস করছেন। শাহিদা বেগম আনসার ও ভিডিপি সদস্য হিসেবে যে কোন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া, উক্ত ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেলে সেখানে চলে যান।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলওয়ার হোসেন ধলুর সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মালেকা বেগম, শাহানাজ বেগম ও শাহিদা বেগমের পারিবারিক দুর্গত অবস্থা আমার জানা আছে। তাদের আবাসস্থল নেই বললেই চলে। পরিবারে উপার্জনক্ষম কোন পুরুষ লোক নেই। ঝড়ে তাদের চালাঘর পড়ে যাবার কথা পরিষদে একাধিক সভায় বলেছি। কোন কাজ হয়নি। শুধুমাত্র ভিজিএফ সুবিধা ছাড়া আমার (তাঁর) পক্ষে আর কোন সুবিধা দেয়ারমত সাধ্য হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জানান, ঐ পরিবারের পক্ষে কেউই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।