চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বড় হলদিয়া গ্রামের কবুতরের খাঁচা থেকে একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সকালে প্রাণীটি উদ্ধারের পর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইতিপূর্বে এ অ লে এমন কোন প্রাণী দেখতে পাননি স্থানীয়রা। লম্বা লেজ, ডোরাকাটা ও চোকামুখ বিশিষ্ট প্রাণীটি দেখতে ভীড় করছে শত শত মানুষ। বিরল প্রজাতির প্রাণীটির জীবন বাঁচাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইতিমধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছে স্থানীয়রা। তবে ইন্টারনেট ঘেটে জানা গেছে প্রাণীটির নাম গন্ধগোকুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য মোতাবেক গন্ধগোকুল বর্তমানে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুলের বাস। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এরা মাঝারি আকারের স্থান্যপায়ী প্রাণী। নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২-১১২ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে লেজই ৪৪-৫৩ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকার ৫৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২.৪-৫.০ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থি থাকে। গন্ধগোকুলের গাট্টাগোট্টা দেহটি স্থুল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত।
মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি-কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। গন্ধগোকুলের ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ে গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অদ্ভূদ একটি প্রাণি বড় হলদিয়া গ্রামের মো. ইউনুছ মোল্লার কবুতর খাঁচায় পাশে ইদুর মারার ফাঁদে আটক হয়। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট যোগাযোগের মাধ্যমে প্রাণিটিকে চিহ্নিত করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, রোববার সকালের দিকে ইউনুছ মোল্লার কবুতরের খাঁচা পাশে কবুতর রক্ষার জন্য ইদুর মাড়ার ফাঁদ দেয়, ওই ফাঁদে এই প্রাণিটি আটক হয়। আমরা বিভিন্ন কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুই খাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা নাছির উদ্দিন শাহ বলেন, ইতিপূর্বে এমন বিরল প্রাণী দেখিনি। আমরা দাবী জানাই প্রাণীটিকে সংরক্ষণ করা হোক।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মী হাবিব উল্লাহ ফরাজী বলেন, সোমবার গন্ধগোকুল উদ্ধার করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো।