সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতার নাম সরিয়ে ফেলার মতো দৃষ্টাতাপূর্ণ কাজ করেছেন মুন্সিগঞ্জ -২ (সংসদীয় আসন ১৭২) টঙ্গিবাড়ী–লৌহজং আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা অনিয়ম ও অভিযোগের কথা জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ ২ সংসদীয় আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি, টঙ্গিবাড়ী থানার বালিগাঁও আমজাদ আলী মহাবিদ্যালয়ের একটি ভবনের নাম ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ মুছে ফেলে সেটিকে নিজের নামে ‘সাগুফতা ইয়াসমিন ভবন’ নামকরণ করেছেন। এ বিষয়ে স্কুলের একাধিক শিক্ষক বিরোধিতা করলেও সেটি মোটেও গ্রাহ্য করেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য এমিলি। তার নামেই ভবনের নামকরণ না করা হলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকির কথাও বলেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির স্বেচ্ছাচারিতায় এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পুরো দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে দলের ত্যাগী নেতা–কর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপি–জামায়াত, মুসলিম লীগ-সর্বহারা পার্টির লোকজনকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে কেউ মুখ খুললে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি বা নিজস্ব ক্যাডার দিয়ে অপমান–অপদস্ত করা টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং থানার নিয়মিত ঘটনা।
এছাড়া, রাতের আঁধারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু কেটে মানুষের বাড়ী–ঘর বিলীন করা, উঠতি যুবকেদের অবাধে মাদকাসক্ত/মাদক ব্যাবসার সুযোগ করে দেয়া এবং এর থেকে নিয়মিত মাসিক চাঁদা আদায় করা এখন ওপেন সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের মধ্যে ভিন্নমত কোনভাবে সহ্য করা হয় না। এক কথায় এই অঞ্চলকে নীরব সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
এমনকি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির স্বামী এমদাদুল হকের চাকুরীর সুবাদে ডঃ ইউনুসের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক থাকায় সম্প্রতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমপির, মন্তব্য দলের নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, “ডঃ ইউনুসের মতো একজন মানুষের সাথে নেত্রী এতো বাড়াবাড়ি না করলেই ভালো করতেন!”
সাগুফতা ইসয়াসমিন এমিলির বাবা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ১৬ ভোট পেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা ছিলেন এলাকা ছাড়া। স্বাধীনতার পর তার পুরো পরিবার সর্বহারা পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে তাদের বাড়ী থেকে সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীরা রক্ষীবাহিনীর উপর গুলি করেছিলো যা তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি প্রচার করেছিলো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলকে টিকিয়ে রেখেছিলেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, লৌহজং উপোজেলার সাবেক সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহম্মেদ মোড়ল, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাঃ হেদায়েতুল ইসলাম বাদল, লৌহজং উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ মোড়ল, মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা শংকর মল্লিকসহ কয়েকশ ত্যাগী নেতাকে দলের বাইরে রেখে সাগুফতা ইয়াসমিন এমলি বিএনপি–জামায়াত থেকে আগতদের দুই উপজেলা কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। এমনকি জাতির পিতা হত্যার পর যারা ১৫ই আগস্টে নাজাত দিবস পালন করেছে, তাদের তিনি কমিটিতে স্থান করে দিয়েছেন। এক যুগের উপরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন সম্মেলন হয় না। সবকিছু কমিটি তার ড্রইংরুমেই নির্ধারিত হয়। এমনকি স্থানীয় ছাত্রলীগকে তিনি কাজ করতে দেন না। একাধিক নেতারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিকে মনোনয়ন দিলে, তা দলের জন্য আত্মঘাতী হবে।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির হাত ধরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন গিয়াসউদ্দিন বেপারী, সাবেক বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি লৌহজং উপজেলা বিএনপি, বর্তমান সিনিয়র সহ সভাপতি লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ, লুৎফর রহমান তালুকদার, সাবেক সহ-সভাপতি কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপি, বর্তমান সভাপতি কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, মরহুম সিরাজুল আলম ফুক্কু বেপারী, সাবেক সভাপতি-উপজেলা বিএনপি, বর্তমান (সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন) সহ সভাপতি-লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ, মরহুম ইকবাল হোসেন, সাবেক বিএনপি/জাতীয় পার্টির এমপি ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে নাজাত দিবস পালনকারী, বর্তমান (সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন) – আওয়ামী লীগের অন্যতম কার্য নির্বাহী সদস্য। অন্যান্য পদে ৬৫-৭০ ভাগ লোকজন বিএনপি/জামায়াত থেকে আসা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ভোরের পাতাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রতি নির্বাচনের আগেই আমার বিরুদ্ধে দলের ভিতর ও বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হয়। এই অভিযোগগুলোও পুরোনো। এ বিষয়ে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) সব জানেন। এলাকার লোকজনের মধ্যে আমার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাই এসব বলে বেড়াচ্ছে।
আমজাদ আলী মহাবিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভবনের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটি নুতন আরেকটি ভবন এবং গরুর মাঠের টাকা দিয়ে, কয়েকজন মিলে এই ভবন করেছি। আমি নিজেও সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়েছি। গরুর মাঠের আয় করা টাকা দিয়ে যে ভবন করা হয়েছে সেটির নাম বঙ্গবন্ধু ভবন কিভাবে রাখা সম্ভব? এমন প্রশ্নও তোলেন সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। নিজের নামে ভবন নেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি থেকে তাকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছি।
বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা বিষয়ে বলেন, যারা বিএনপি-জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল থেকে এসেছে তাদের দলে আসার সুযোগ আমি করি নাই। এটা করেছিলেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম খান বাদল। নিজের স্বামীর বিষয়ে বলতে গিয়ে সাগুফতা ইসয়াসমিন আরো বলেন, শুধু আমার স্বামী বলেই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তার চাকরি চলে গিয়েছে। আমার অসুস্থ স্বামীকে নিয়েও একটি মহল নোংরামি করছে। আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেলে ভোটে জয়ী হয়েই আমি এসব বিষয়ে জবাব দিবো।