উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একসময় বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব। কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এটাই হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। সেভাবেই আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি।’
বিভিন্ন সময়ে আকাশপথে যোগাযোগের রুট পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, একসময় আন্তর্জাতিক হাব ছিল হংকং। এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি, একসময় আমাদের কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক হাব। রিফুয়েলিংয়ের জন্য অনেকেই এখানে আসবে, থামবে; বাংলাদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করবে। আর কক্সবাজারে নামলে তো আমাদের সবচেয়ে দীর্ঘ বালুকাময় সি বিচ সেটাও সবাই উপভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নবনির্মিত টার্মিনাল তিন পরিদর্শন করেন। এসময় বাংলাদেশ বেসামারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান নতুন এই টার্মিনালের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘুরিয়ে দেখান। এসময় বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
নতুন টার্মিনালে অটোমেশন সিস্টেমে কীভাবে বোর্ডিং পাস হবে, তাও করে দেখানো হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে একটি ডামি বোর্ডিং পাসও দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ইমিগ্রেশন কাউন্টারও পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে তিনি ‘প্রি-বোর্ডিং সিকিউরিটি স্ক্যানিং’ জোনে যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বোর্ডিং ব্রিজে। এসময় তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের বিভিন্ন স্থিরচিত্র দিয়ে সাজানো একটি ফটোগ্যালারি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে যান। এসময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, জাপান সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদী ভাইস মিনিস্টার মাশাহিরো কুমুরা, জাপান সরকারের ভূমি অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ইয়োহারা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন ও বাংলাদেশ বেসামারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান প্রমুখ।
বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল তিন তলা বিশিষ্ট। টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মিটার। যাত্রী ধারণ সক্ষমতা হবে বছরে ১৬ মিলিয়ন। তৃতীয় টার্মিনালের কার পার্কিংয়ে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে। উড়োজাহাজ পার্কিং বে থাকবে ৩৭টি। আগমনী যাত্রীদের জন্য লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য ১ হাজার ৩০০ বর্গটার আয়তনের একটি কাস্টম হল থাকবে। সেখানে ছয়টি চ্যানেল থাকবে। চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, এরমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ১৫টি। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে ১২৮টি। এরমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ইমেগ্রেশন কাউন্টার ১৫টি। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৬৬টি। আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৫৯টি। ভিভিআইপি ৩টি। বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। পরবর্তী সময়ে আরেকটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত করা হবে। বর্তমান টার্মিনাল দুটির সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনও সংযোগ থাকবে না। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে করিডোর নির্মাণ করা হবে।