সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওইসব এলাকায় অবাধে চলে মাছ শিকার। এমনকি বেশি মাছ পেতে নদীতে ছিটানো হয় বিষ। এসবের পেছনে কাজ করে শক্তিশালী একটি চক্র। ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার সুযোগ করে দেয়। চুক্তির মাধ্যমে জেলেদের কাছে অঘোষিত ইজারা দেয় বনের নিষিদ্ধ ও অভয়ারণ্য নদী-খাল। বন বিভাগের কর্মী ছাড়াও ওই চক্রে রয়েছেন দাদন দেওয়া মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালী।
তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধারার দায়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করা হয়েছে।
আটক জেলেরা হলেন- কয়রা থানার কালিকাপুর গ্রামের আব্দুল গফুর সানার দুই ছেলে মিরাজুল ইসলাম ও মিনারুল ইসলাম, মৃত আয়জদ্দীন সানার ছেলে আব্দুল গফুর সানা, মৃত মিরালী বিশ্বাসের ছেলে লুৎফর রহমান বিশ্বাস, শাহাবুদ্দীন গাজীর ছেলে আজিজুল গাজী ও রহিম সানার ছেলে হাবিবুল্যাহ সানা।
সেলিম হোসেন কয়রা উপজেলার কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা। সুন্দরবনে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। চুক্তির মাধ্যমে (ঘুষ দিয়ে) সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এলাকায় যেসব জেলে মাছ ধরতে যান, সেলিম তাদের মধ্যে একজন।
তিনি বলেন, অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরেই সেই খরচ তুলতে হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে বনবিভাগের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারটি নৌকায় আমরা ১২ জন জেলে বনে প্রবেশ করি। এর আগে বেশি মাছ পাওয়ার আসায় সুন্দবনের অভয়ারণ্যে এলাকায় মাছ ধরার জন্য দালাল শহিদুল ওরফে কানা শহিদুলের মাধ্যমে নোটাবেকি স্টেশনের ফরেস্টার শাহাদাতের সাথে ৮০ হাজার টাকায় ছয় দিনের জন্য অলিখিত চুক্তি হয়। যার মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী আমরা বাদায় (সুন্দারবনে) প্রবেশের আগেই নগদ ৬০ হাজার টাকা নোটাবেকি স্টেশনের ফরেস্টার শাহাদাতের কাছে পরিশোধ করি।
এসময় সুন্দরবনে মাছ ধরা অবস্থায় তুলনামূলকভাবে বেশি ও বড় মাছ পাওয়ায় চুক্তি ভঙ্গ করে নোটাবেকী স্টেশনের ফরেস্টের শাহাদাত আমাদের ছয়জন জেলেকে আটক করে ও চারটি নৌকা জব্দ করে। এসময় আমরা বাকি ছয়জন পালিয়ে যায়। তবে ওই সময় একই স্থানে বিষ দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে একটি নৌকা ও কয়েকজন জেলেকে আটক করা হলেও টাকার বিনিময়ে তাঁদের ছেড়ে দেয় ওই ফরেস্টের শাহাদাত।
চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে নোটাবেকী স্টেশনের ফরেস্টের শেখ শাহাদাত হোসেন বলেন, এটি ভিত্তিহীন অভিযোগ। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত বুধবার দুপুর একটার দিকে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এলাকার চামটার খাল নামক স্থানে চারটা নৌকা দেখতে পেয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছে তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে আটক করি ও চারটি নৌকা জব্দ করি। তবে এসময় বাকি ছয়জন জেলে গভীর বনে পালিয়ে যায়।
এবিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, সাধারণ জেলে হোক বা প্রভাবশালী বনের আইন সবার জন্য সমান। অভয়ারণ্যে প্রবেশ বা বনে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, কোনো বনকর্মীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ থাকলে জেলেরা সরাসরি আমাদের জানাক। তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেব।