আশ্রায়ন প্রকল্পের নামে জমি অধিগ্রহনে দুর্নীতি: ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করছে এলাকাবাসী
নরসিংদীর বেলাবতে আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনে ব্যাপক অনিয়ম ও সরকারী অর্থ লুটপাটের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই লুটপাটের নৈপত্যে ছিলেন আমলাব ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হাসান বলেছেন এলাকাবাসী।
সকল তথ্য উপাত্ত অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য ও আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের নামে সরকারী অর্থ লুটপাটের সত্যতা।
উপজেলার আশ্রায়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম অনুসন্ধান ছিল আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামে নির্মিত আশ্রায়ন প্রকল্পের কেন্দ্রে। এই আশ্রায়ন কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহনের জন্য সরকারের কাছ থেকে নেওয়া হয় শতাংশ প্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে বক্তব্য দেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের আত্মীয় জমিদাতা আলমগীর ভূইয়া।
তবে আশ্রায়ন প্রকল্পের নীতিমালা অনুসারে জমি অধিগ্রহনের জন্য দর নির্ধারন করা হয়েছে বর্তমান মৌজার দামের সাথে। তাছাড়া লাখপুর মৌজার বর্তমান জমির দাম গন্ডা প্রতি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ রাস্তার সাথে হলে দাম বেশি পরবে আর ভিতরে হলে দাম কম। তবে লাখপুর আশ্রায়ন কেন্দ্রের জন্য যে জমি অধিগ্রহন নেওয়া হয়েছে তা রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ গজ ভিতরে এবং নাল জমি। যা গন্ডা প্রতি ৬০-৭০ হাজার। শতাংশে পরবে ৩৫-৪০ হাজার।
সেই জায়গা ইউপি চেয়ারম্যান, আমালাব ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েবের সাথে চুক্তি করে চেয়ারম্যানের আত্মীয় আলমগীর ভূইয়ার কাছ থেকে সরকারকে দিয়ে কিনিয়েছে শতাংশ প্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার করে। যে জমি অধিগ্রহনে সরকার থেকে অতিরিক্তি অর্থ খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা। এভাবে সরকারী প্রকল্পগুলোতে অতিরিক্তি অর্থ আত্মসাতের কারনে সরকারকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত বরাদ্ধ, ব্যহত হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন।
আর সরকারের তহবিল থেকে বরাদ্ধকৃত অতিরিক্ত অর্থ ভাগভাটোরা হয়ে পকেট ভরছে এ প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসকল লুটপাট বন্ধ করতে পারলে সারা দেশ থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি কমবে। উদ্বৃত্ত হবে কোটি কোটি টাকা যা দিয়ে অন্যান্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায় করা সম্ভব।
এ বিষয়ে আমলাব ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহমেদ পরশ মোল্লা বলেন, এখানে চুরি না, পুকুর চুরি হয়েছে। আমলার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হাসান এ পুকুর চুরির সাথে সরাসরি জড়িত। কেননা যে জায়গায় আশ্রায়ন প্রকল্প করা হয়েছে সেখানে যোগাযোগের রাস্তা না থাকা সত্বেও তার নিকট আত্মীয় আলমগীর ভূইয়াকে দিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য নায়েব, সার্ভেয়ার ও ইউএনওর সাথে চুক্তি করে এ জমি ক্রয় করিয়েছে। শুধু জমি না, আশ্রায়ন প্রকল্পের আরও অনিয়ম আছে যা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। এলাকাবাসী সবই জানে। আমাদের দাবী সরকারী একটি তদন্ত আসুক। আমরা এলাকাবাসী থাকবো। তখনই এ পুকুর চুরির আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ জমির দাম শতাংশ প্রতি ৪০ হাজার হবে, আর সেখানে জমিদাতা আমাদের সবাইকে বলেছে যে তিনি শতাংশ প্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার করে পেয়েছে। আমরা চাই দুদক বা সরকারী তদন্তের মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাবেন।
লাখপুর গ্রামের মানিক মোল্লা ও ফারুক মোল্লা বলেন, এ জমির দাম সর্বোচ্চ শতাংশ প্রতি ৪০ হাজার। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হাসান তার নিকট আত্মীয় আলমগীর ভূইয়ার জায়গা নায়েব ও ইউএনওর সাথে আতাত করে সরকারকে দিয়ে শতাংশ ১ লাখ ৭০ হাজার করে কিনিয়েছে। তাই এ প্রকল্পে সরকারকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে।
একটি সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ এর সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোড়ালো দাবী জানানো হয়। তাছাড়া এখানে যারা বসবাস করছে তারা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আমলাব ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত নুরুল হাসান এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পের অধিগ্রহনের জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া পর্যন্ত আমি বলতে পারবো। তাছাড়া জায়গা অধিগ্রহন চেয়ারম্যানের কাজ না। তাছাড়া ৪০-৫০ হাজার টাকা শতাংশ কোনো জায়গা লাগপুর পাওয়া গেলে আমিও কিনবো।
আলমগীর ভূইয়ার সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলমগীর ভূইয়া আমার বংশের। তাই যখন কোথায় প্রকল্পের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমি আলমগীর ভূইয়ার সাথে নায়েব ও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করায়।
এদিকে বেলাবো উপজেলা স্টেডিয়ামের জায়গা ক্রয় করতে গিয়ে আমলাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কোটি টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়টি পুরো উপজেলা জুরে মানুষের মুখে মুখে বিরাজ করছে । শুধু তাই নয়, এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা লাগিয়ে রাখছেন এই চেয়ারম্যান। আর ঝামেলাকে পুজি করেই উভয় পক্ষের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমলাব ইউনিয়নের ওয়ারী গ্রামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের জায়গা-জমির ঝামেলা অনেক দিনের। ভেঙে দিবে বলে আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকাও নিয়েছে চেয়ারম্যান, এখন চেয়ারম্যান ঝামেলাও ভাঙ্গতেছেনা, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না বরং শুনতেছি আমাদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আরো দেড় লাখ টাকা নিয়ে রাখছে। এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার এই চেয়ারম্যানের কাছ থেকে রেহাই চান।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান শমশের জামান ভূইয়া রিটনকে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।