আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য শাসকদের ২৯ বছরের শাসনামলে দেশে কী উন্নয়ন হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কেন হঠাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, সন্দেহ হয় রে।
তিনি বলেছেন, যারা ভোট চুরি করেছে তাদের মুখ থেকে শুনতে হয় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে। সেইসময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে যাদের এতো উদ্বেগ দেখিনি। অথচ সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে যখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্যজোট মিলে পেয়েছিল মাত্র ২৯ টা সিট। পরে আবার একটা সিট পেয়েছে, সবমিলিয়ে মোট ৩০টা সিট। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, এমন কোনো অপকর্ম নেই তারা করেনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগদান করে ৩০০ আসনে ৭০০ জনের উপরে লোককে নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো। এখন তাদের মুখে আবার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি, সব জায়গায় তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যখন আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন আমার প্রশ্ন হলো, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আমারা স্লোগান দিয়েছি, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।
জেইক সুলিভান নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তো আমরা সেটাই মেনে চলি। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আসলে আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। যে আমরা নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি কথা বলি, আমাদের দেশের কিছু লোক... । এখন যারা নির্বাচন বয়কট করেছে অথবা নির্বাচনকে সবসময় কলুষিত করেছে বা ভোট চুরি-ডাকাতি করেছে। এখন তাদের কাছ থেকেই শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো সেটাই।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং “লস এন্ড ড্যামেজ” ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে তো অনেকে ক্ষমতায় ছিল, তারা মানুষকে কী দিয়েছে? মানুষ একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারতো না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। এখন নির্বাচন নিয়ে এত কথা কেন? তারা কি আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া চায় না? সন্দেহ হয় রে!
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।