প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৫৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
উজানের পাহাড়ী ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি কমে গেছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে তিস্তা নদীর পানি। এদিকে তিস্তায় রেকর্ড পরিমান পানি বৃদ্ধি ও বন্যার শংঙ্কায় রাতে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষেরা বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ঘরে ফিরে গেছেন। তিস্তার তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক বাঁধের আড়াই’শ ফুট অংশ ভেঙ্গে গেছে। এতে করে পশ্চিম ইচলী’র আবুল কালাম (৪০), রাজ্জাক (৪২), আব্দুর রহমানের (৪৫) বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ১০ হেক্টর আমনের ক্ষেত। হুমকির মুখে রয়েছে ২টি মন্দির, একটি ঈদগাহ মাঠ ও ৪০ থেকে ৫০টি ঘরবাড়ি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতের সিকিমে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বুধবার তিস্তা নদী বেষ্টিত উত্তরের ৫ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শংঙ্কার তথ্য দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে দুপুর থেকে মাইকিং ও নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সার্বিক তদারকিসহ স্থানীয় প্রশাসন জরুরী প্রয়োজনে কিংবা দূর্গতদের উদ্ধারে হটলাইন নম্বর চালু করে। রাত ৮টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর রাত ৯টা থেকে পানি কমতে শুরু করে এবং রাত ১১টায় ওই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমলেও কাউনিয়া পয়েন্টে বেলা ১২টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বিগত ২৪ ঘন্টা বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘন্টা স্থিতিশীল থাকবে এবং আগামী ২৪ ঘন্টায় কাউনিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসতে পারে।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিনবিনা থেকে চর শংকরদহ পর্যন্ত একটি বাঁধের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আশ্বাস দিয়েও এ কাজ করেনি। পরবর্তীতে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বালু’র বাঁধ দিয়ে কয়েক বছর চরবাসী ও ফসলী জমিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করেছি। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে সেই বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এতে করে এলাকার ৩টি বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়াসহ একরের পর একর আমনের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে দুটি মন্দিরও।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না বলেন, পশ্চিম ইচলীকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি কমে আসলে তারা সেখানে কাজ শুরু করবে। এছাড়া বৃহস্পতিবার এমপি মহোদয়ের উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা-ভাঙ্গন থেকে উপজেলার মানুষকে রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।