সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
শেখ হাসিনা; হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৬:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

“জীবন হোক কর্মময়, নিরন্তর ছুটে চলা। চিরকাল বিশ্রাম নেয়ার জন্য তো কবর পড়েই আছে”-----এমনটি বলেছিলেন হযরত আলী (রা)। এমন প্রচলিত মতবাদের আলোকে ঠিক যেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন তিনি। হ্যাঁ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনন্দিত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আমাদের সু- প্রিয়, শ্রদ্ধার জননেত্রী। জীবনের পথচলায় রাজনৈতিক অপশক্তিকে রুখে দিয়ে একটি দেশের জনগোষ্ঠির ভাগ্যান্নোয়নে উদাহরণ হয়ে তিনি বলছেন, সামনেই গতিরোধক। অর্থাৎ মানুষকে এই পৃথিবী ছাড়তেই হবে। কিন্তু, হযরত আলীর উক্তির মত করে একজন শেখ হাসিনা ছুটছেন এবং বাংলাদেশকে আগলিয়ে রাখতে পারছেন। 

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। বরেণ্য এই রাজনৈতিক নেত্রীর ৭৭-তম জন্মদিন। তাঁর জন্য শুধু বলতে পারি, আপনাকে বাঁচতে হবে এবং বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র করার যে অঙ্গিকারকে সঙ্গি করে এগিয়ে যাচ্ছেন, তার ধারাবাহিকতা রাখতে গেলে আপনাকে বাঁচতেই হবে। এই দেশে 'প্রতিবিপ্লব' হয়েছে অতীতে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী হয়ে আপনার এখনো বহু কিছু দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করার সুযোগ আছে।   

সামাজিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়,  ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় আমাদের মহান এই নেত্রী জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসাবে প্রকৃতি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক মঞ্চে শ্রেষ্ঠ সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। অতি অবশ্যই বাংলাদেশের চার চার বারের প্রধানমন্ত্রী। 

এক ঝলকে তাঁর জীবন পরিক্রমাকে চোখ বন্ধ করে সাজাতে চাইলে বা ধারাভাষ্য প্রদান করতে চাইলে বলা যায় যে, দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।

বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায়  বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ নামে খ্যাত। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড.ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান 'জয়'-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

বলাবাহুল্য, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।

রাজনৈতিক পর্যায়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এক অদম্য নারী সত্তা হয়ে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার নিমিত্তে তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসাবে খ্যাতি পেতে শুরু করেন। তেমন দুর্গম পথকে সামলিয়ে শাসকশ্রেণির শীর্ষ চরিত্র হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর জাত চিনিয়ে দেন। 

এদিকে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত,  যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়  স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা, নিম্নবিত্ত ও পল্লি জীবনকে সুখময় করার জন্য বিভিন্ন ভাতা প্রদান চালু করাসহ  অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে যে বাংলাদেশ, তাঁর সবকিছুর প্রধান বাস্তবায়নকারীর নাম হল, শেখ হাসিনা। 

রাজশাহী বদলে গিয়েছে একটি নগর হিসাবে। একজন শেখ হাসিনা না থাকলে আমার পক্ষে রাজশাহীকে কি পরিপাটি করা সম্ভব হত ? 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেতার রাজনৈতিক ইতিহাস একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তারই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। 

শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।

শেখ হাসিনা চরিত্রের  সবচেয়ে বড় গুন হল, তিনি তাঁর পিতামাতাকে আদর্শ ধরে নিজের পথচলাকে নির্ধারিত করেছেন। গ্রিক একটি প্রবাদ ছিল। তা হল, . “যে তার পিতামাতাকে সম্মান করে, তার মৃত্যু নেই”। সে কারণেই বলতে হয়, শেখ হাসিনার জীবন একদিন প্রকৃতির নিয়মে থেমে যাবে, তা মানাটা কঠিন হলেও তাঁর সত্যিকারের মৃত্যু হবে না। তিনি বাঙালি জাতির জন্য শ্রেষ্ট সত্তা হয়ে বেঁচে থাকবেন। তাঁর জন্মদিবসটি  গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে কিংবা জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে। যদিও জাতিসংঘের নানা সূচিতে অংশ নিতে তিনি নিজেই দেশে অবস্থান করছেন না। ব্যক্তি পর্যায়ে আমি তাঁর জন্য আলাদা করে প্রার্থনায় যাব। একজন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কতটা দূরে নিয়ে গেছেন তা অনুধাবনে থিতু হতে পারার মধ্যেই সার্থকতা। তবে নিন্দুকেরাও আছে, অন্ধ গোত্রও আছে---- তখন পুরোনো অস্ট্রিয়ান একটা প্রবাদ মনে পড়ে,  তা হল,  “অন্ধরা দেখতে না পেলেও আলো আলোই থাকে, সে অন্ধকার হয়ে যায় না”।  

প্রিয় নেত্রী, শুভ জন্মদিন ! 

লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশব আওয়ামী লীগ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]