টাঙ্গাইলের মধুপুরে আ. লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় কৃষিমন্ত্রী, নেই সভাপতি-সম্পাদক
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আওয়ামী লীগের শক্তি নেই। আওয়ামী লীগের শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। জনগণের এই শক্তি দিয়েই পৃথিবীর যেকোনো শক্তিকে আমরা মোকাবিলা করার যোগ্যতা রাখি।
মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন।
সভায় মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব আলী সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাপ্পু সিদ্দিকী, মধুপুর পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল গফুর মন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম ও মীর ফরহাদুল আলমসহ ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা।
কিন্তু এ বর্ধিত সভায় অনুপস্থিত ছিলেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম আবুসহ তাদের সমর্থকরা।
এসভার মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিরোধ আবারো প্রকাশ্যে আসল।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ধনবাড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। সেখানে মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবুও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তিনি গত মে মাসে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নির্বাচন সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি ও কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দেন। এরপর থেকে মন্ত্রী ও তার সমর্থকদের সঙ্গে ছরোয়ার আলম খানের দূরত্ব বাড়তে থাকে। জেলা আওয়ামী লীগ ছরোয়ার আলম খান আবুকে শোকজও করে।
বিরোধের জেরে কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ছরোয়ার আলম খানের লোকজনের মারামারি সংঘর্ষ হয়।
এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহতও হন। দুই গ্রুপে পৃথকভাবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিও করে।
কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়েই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের এমপি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক একজন সরল মনের মানুষ।
দলের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দেন। একটি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রীকে বহিরাগত ও রাজনীতিতে আত্মীয়করণ করেছেন এমন আপত্তিকর বক্তব্য দেন। পরে তাকে শোকজও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু বলেন, আজকের বিশেষ বর্ধিত সভার বিষয়ে দলের সভাপতি এবং আমি কিছুই জানি না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে সহসভাপতি ইয়াকুব আলী এ সভা ডেকেছেন। সভায় কমিটির অর্ধেকের কম সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আমরা বিষয়টি জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানাব। স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার বলেন, আমি শোকজের জবাব দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমি টানা ৩২ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একাধিকবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। আমি প্রার্থী হওয়ায় তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ।
এদিকে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে সুপরিচিত মধুপুর ধনবাড়ি আসনটি। গ্রুপিংয়ের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তৃণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীরা এ বিরোধ কোন্দল নিরসন চেয়ে দলের ঐক্যবদ্ধতা চান।