২০১৩-১৪ থেকে ২০২০-২১। এই ৮টি অর্থবছরে রাজশাহীর এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রায় ২৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ পেয়েছে। এই সময়ে সব সরকারি সংস্থা মিলিয়ে তার মোট কাজের পরিমাণ প্রায় ৪৩১ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ মোট কাজের অন্তত ৬০ শতাংশ তারা পেয়েছে রাসিক থেকে। প্রতিষ্ঠানের নাম রিথিন এন্টারপ্রাইজ। মালিক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের অনুমোদিত কমিটিতে যার নাম নেই। অথচ রাসিক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ হবার কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দাবি করে সংগঠনে ক্রমাগত সংকট তৈরি করে চলেছেন। যুবলীগের গঠনতন্ত্র ক্রমাগত লঙ্ঘন করে এককভাবে পৃথক কর্মসূচি পালন করেন তিনি। সেই সঙ্গে যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে ঠিকাদারি করে হয়েছেন অঢেল টাকার মালিক। অভিযোগ রয়েছে, এই বিপুল টাকা থেকে বিভিন্ন সময় তিনি হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করেছেন। অন্যদিকে জামাত শিবিরের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্ক তৈরি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হবার পর রিথিন এন্টারপ্রাইজের রনিই নগর ভবনের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তার কথার বাইরে এখানে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক কাজ ছাড়া আর সব কাজেই রনির প্রতিষ্ঠান নামে কিংবা বেনামে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়া রনি যুবলীগের শীর্ষ পদে আসার জন্য এখন মরিয়া। এ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে স্থানীয় যুবলীগে। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুধুমাত্র রনিকে নেতৃত্বে আনতে কেন্দ্রীয় একাধিক দায়িত্বশীল নেতাকে ম্যানেজ করে নজিরবিহীনভাবে শোকের মাস আগস্টে সম্মেলন প্রস্তুতির চিঠি দেয়া হয়। পরে তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাসিকসহ সরকারি সব সংস্থায় রিথিন এন্টারপ্রাইজের কাজের নথিপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রথম দফায় মেয়র নির্বাচিত হবার পর মেয়াদের শেষ দিকে এসে তৌরিদ আল মাসুদ রনির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আগেই মেয়র লিটন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। সবগুলো কাজ পায় রিথিন এন্টারপ্রাইজ। প্রথম মেয়াদে লিটনের পরাজয়ের পর থেকেই রিথিন এন্টারপ্রাইজের কাজ কমতে শুরু করে। ২০ কোটি থেকে নেমে পরের অর্থবছরে তা দাঁড়ায় প্রায় ৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আরও নেমে হয় মাত্র প্রায় আড়াই কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে সিটি করপোরেশনের একটি কাজও পায়নি রিথিন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাসিক থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি। ঠিক তার পরের অর্থ বছরেই তা লাফিয়ে বেড়ে যায় প্রায় ১৪ গুন। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরুতেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ফের রাসিক মেয়র পদে ফেরেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিথিন এন্টারপ্রাইজ ও তার মালিক তৌরিদ আল মাসুদ রনিকে।
জিরো থেকে হিরো
২০১৬-১৭ অর্থবছরে রিথিন এন্টারপ্রাইজ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৮ টাকার উন্নয়ন কাজ পায়। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একটি কাজও ছিলো না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সব সরকারি সংস্থা মিলিয়ে রিথিন কাজ পায় মোট ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৭ টাকার। এর মধ্যে রাসিকের কাজ ছিলো মাত্র ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার ৯২৯ টাকার। চিত্র বদলে যায় ২০১৮ সালে মেয়র হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনের প্রত্যাবর্তনের পর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব সংস্থা মিলিয়ে রিথিন এন্টারপ্রাইজের কাজের মূল্যমান ১০১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮০৩ টাকা। এর মধ্যে রাসিকের কাজই ছিলো ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৪ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব সংস্থা মিলিয়ে মোট ৮৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৫ টাকার কাজ করে তৌরিদ আল মাসুদ রনির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৫৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩০ টাকার কাজই ছিলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের। ২০২০-২১ অর্থবছরে কাজের পরিমাণ সব দিক থেকেই প্রায় দ্বিগুণ হয়। সেই অর্থবছরে সব সংস্থা মিলিয়ে রিথিন এন্টারপ্রাইজ করে ১৭৪ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার ১২২ টাকার কাজ। এর মধ্যে ১০৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৭৪ টাকার কাজই ছিলো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত কাজ সম্পাদনের সনদ, বিল প্রাপ্তির নথিসহ বিভিন্ন নথিপত্র থেকে দেখা যায়, এই ৮টি অর্থবছরে রিথিন এন্টারপ্রাইজ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ২৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৭ টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করে। এর মধ্যে ২৪২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৮ টাকার কাজই তারা পেয়েছে খায়রুজ্জামান লিটন মেয়রের পদে আসীন থাকাকালে।
স্থানীয় ঠিকাদাররা জানান, শুধু সিটি কর্পোরেশনের কাজ নিয়েই থেমে থাকেননি তৌরিদ আল মাসুদ রনি। খায়রুজ্জামান লিটন ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে তাদের প্রভাবে রাজশাহী ও বাইরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্থানীয় বড় কাজগুলোর অধিকাংশই পেয়েছেন রনি। এমনকি নিয়মবহির্ভুতভাবে রাজশাহী ওয়াসার তালিকাবদ্ধ ঠিকাদার হওয়ার পরেও মেয়র লিটনের প্রভাবে তাকে ওয়াসার পরিচালনা পরিষদের সদস্য করা হয়। রিথিন এন্টারপ্রাইজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করেও এই তথ্যের সত্যতা মেলে। লিটন মেয়র হওয়ার আগে রাসিক বাদে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও সংস্থায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৮ টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ২২ হাজার ২০৭ টাকার কাজ করে রিথিন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাপ্ত কাজের মূল্যমান লাফিয়ে হয়ে যায় ৪৬ কোটি ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৮২৯ টাকা। পরের অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিলো ২৩ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার ১০৫ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাসিক বাদে অন্যসব সরকারি দফতর ও সংস্থায় ৬৭ কোটি ৯২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৮ টাকার কাজ করে রিথিন এন্টারপ্রাইজ।
রনির জন্য সব মাফ!
২০১৭ সালে ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকার মঠ ও পুকুর সংস্কারের একটি প্রকল্পের কাজ পায় রিথিন এন্টারপ্রাইজ। এই কাজটি শুরুর পর পরই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে নিম্নমানের কাজের। এক পর্যায়ে নির্মাণ শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ধসে পড়ে পুকুরের প্রটেকশন ওয়ালের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে সেই সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কাজের মান বজায় রাখার অনুরোধ করা হয় বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে। তৎকালীন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিজেও একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
একই বছর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মিয়াপাড়া পাবলিক লাইব্রেরি ভেঙে সেখানে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ পায় রফিক কন্সট্রাকশন, রিথিন এন্টারপ্রাইজ ও মিম কন্সট্রাকশন জয়েন্ট ভেঞ্চার। কাজটি সম্পন্ন করতে ভারত সরকার আর্থিক সহায়তা দেয়। সেই সময় পুরনো ভবন ভেঙে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হলেও বরাদ্দের সব টাকা পাইলিংয়েই শেষ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাজটি বন্ধ হয়ে থাকে।
এসব ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, ২০১৮ সালে মেয়র হিসেবে লিটন দায়িত্ব নিলে নতুন নতুন কাজ দিয়ে রিথিন এন্টারপ্রাইজকে পুরস্কৃত করা হয়। বিস্ময়করভাবে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সেই অসমাপ্ত পাবলিক লাইব্রেরির সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে রিথিন এন্টারপ্রাইজকে কাজ সম্পাদনের সনদ ইস্যু করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
বিষয়টি নিয়ে রাসিক প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার দাবি করেন, কাজ সম্পাদনের সনদ ইস্যু করার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওটার (পাবলিক লাইব্রেরি) কাজ শেষ হয়নি। তাই সার্টিফিকেট দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যদি সেটা হয়ে থাকে, তাহলে কেন দেয়া হলো তা দেখতে হবে।’ প্রধান প্রকৌশলী আরও জানান, ভারত সরকারের অনুদানের অর্থ পাইলিংয়ে শেষ হয়ে যাওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাকি কাজ শেষ করার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আগের কাজ না করে ফেলে রাখা ও দরবৃদ্ধির ক্ষতিপূরণের কী হবে- জানতে চাইলে নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘বোঝেনই তো, সবখানেক সবকিছু আমরা করতে পারি না।’ কথিত রনির লাইসেন্সে যতগুলো জায়গায় কাজ হয়েছে প্রত্যেকটা জায়গায় কাজের মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জড়িত, রনি কোনো কাজ করার আগেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজের এস্টিমেট আগেই করে ফেলে, সেখানে ১০ টাকা দ্রব্যের দাম ৭০ টাকা দেখিয়ে কাজের এস্টিমেট সম্পন্ন করে, এরপরে সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ নিয়ে নিম্নমানের কাজ করে। এ সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার কোন জায়গা নেই।
খুঁটির জোর কোথায়?
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সপরিবারে ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেই সফরে লিটন পরিবারের সঙ্গী ছিলেন রিথিন এন্টারপ্রাইজের কর্নধার তৌরিদ আল মাসুদ রনি। সৌদি আরবে ওমরাহ পালনকালে ও এর আগে পরে মেয়র ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা যায় রনিকে। ওমরাহ পালনকালে ঠিকাদারকে সঙ্গী করা নিয়ে সেই সময় রাজশাহীতে ব্যাপক সমালোচনাও হয়। মেয়রের সঙ্গে রনির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক কতোটা গভীর, তা স্পষ্ট হয় এসব ঘটনায়।
রনির একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, রনির সঙ্গে দুবাইয়ের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই সুবাদে সাম্প্রতিককালে রনি ঘন ঘন দুবাইয়ে যাতায়াত করছেন। সূত্রগুলো দাবি করেছে, দুবাইয়ের লিটন পরিবারের সঙ্গেও তিনি একাধিকবার গিয়েছেন। সেখানে মূলত বিনিয়োগ ও সম্পদ ক্রয়ের কথা রনি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন। এ থেকে রনির সঙ্গে মেয়র পরিবারের ব্যবসায়িক যোগাযোগও আলোচনায় এসেছে রাজশাহীতে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী রাজনীতিতে তৌরিদ আল মাসুদ রনির প্রবেশ খুব স্বল্প সময়ের হলেও শুধুমাত্র রাজশাহীতে দলের সর্বোচ্চ নেতা ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি নজিরবিহীনভাবে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন। তিনি প্রকাশ্য সভায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে লাগাতার বিরূপ মন্তব্য করে চললেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ওই একই প্রভাবের কারণে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতাকে ‘ম্যানেজ’ করে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনটির নেতৃত্বে আসার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। রাজশাহীর আওয়ামী রাজনীতিতে খারুজ্জামান লিটন ও তার পরিবারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নিশ্চিতের মিশনে কাজ করছেন এই রনি। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিরোধী কর্মসূচিগুলো সংগঠিতও করেছেন তিনি। যুবলীগের নেতৃত্বে আনার মাধ্যমে এই সংগঠনটিকেও পুরোপুরি কব্জায় নিতে চান লিটন। আর রনির খুঁটির জোর মূলত এখানেই।
যুবলীগে সংকটের নেপথ্যে
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সংকটের নেপথ্যে রয়েছেন রনি।
যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল রমজান আলীকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন বাচ্চুকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর যুবলীগের কমিটি করা হয়। এর এক যুগ পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চের সম্মেলনেও রমজান আলী ও বাচ্চু নিজ নিজ পদে পুনর্নির্বাচিত হন। এই কমিটিই মেয়াদ পেরিয়ে যাবার পরেও দায়িত্বে রয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে তাগাদা দিলেও তা হয়নি। এরপর সবশেষ পুরনো ওয়ার্ড কমিটি বহাল অবস্থাতেই নগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয় কেন্দ্র থেকে।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে নগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন প্রভাবশালী ঠিকাদার তৌরিদ আল মাসুদ রনি।
যুবলীগের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিজের পথ পরিস্কার করার জন্য খোদ খায়রুজ্জামান লিটনকে দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওয়ার্ডের কমিটি করতে দেননি তৌরিদ আল মাসুদ রনি। অর্থ ও প্রভাব দেখিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের হাত করেছেন তিনি। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের আঞ্চলিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতাকেও হাত করেছেন তিনি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয় করে আগামীতে যুবলীগের সভাপতি হতে সর্বোচ্চ নোংরামির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে রনির দুজন সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, মেয়র লিটন ও তার স্ত্রী নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহিন আকতার রেনী এককভাবে যুবলীগের সভাপতি হিসেবে তৌরিদ আল মাসুদ রনিকে পছন্দ করেন। এমনকি তাদের পারিবারিক সম্পর্ক এতোটাই গভীর যে, গত বছর সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনের সময় লিটন পরিবার রনিকে সঙ্গে নিয়ে যান। এছাড়া চেম্বার অব কমার্স, ক্রীড়া সংস্থা বা ওয়াসা বোর্ডের মতো স্থানীয় বিভিন্ন কমিটিতে মেয়র পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবেও তাকে বসানো হয়েছে