চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুব মহিলা লীগের নেত্রীর হামলায় মহিলা আ. লীগের নেত্রী আহত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে নৌকায় ভোট চেয়ে উঠান বৈঠক, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের ্তা্লিকা তৈরি করতে গিয়ে উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এর হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সলেনুর বেগম। গত শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভোলাহাট উপজেলার আলালপুর দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসায় দলীয় নেতা কর্মীদের সামনে এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত নারী ভোলাহাট উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মোসা. সলেনুর বেগম।
এই বিষয়ে সলেনুর বেগম ভোলাহাট উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভোলাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ , গত প্রায় দুই বছর ধরে ভোলাহাট উপজেলায় মহিলা আওয়ামী লীগের কোন কমিটি নেই । এমন কি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে নেই কোন কমিটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ কে সামনে রেখে আ.লীগের সহযোগী সংগঠনটির ইউনিয়ন ও গ্রাম কমেটির সাধারণ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সাকিনা খাতুন পারুল। এমতাবস্থায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক ইউ পি সদস্য সলেনুর বেগম ভোলাহাট উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তা ও ২০/২৫ জন মহিলা কর্মী নিয়ে তিনটি ইউনিয়নে সাধারণ মহিলা সদস্যের তালিকা তৈরি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী তানজিলা খাতুন, চম্মা খাতুন, মালেকা বেগম জানান, ঘটনার দিন ৩০/ ৪০ মহিলা কর্মী সহ সভাস্থলে যান তাঁরা। তখনও সভা শুরু হয়নি। এরমধ্যেই হঠাৎ করে যুব মহিলা লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সাহাজাদী বিশ্বাস উপস্থিত হয়ে সলেনুর বেগমের সালামের উত্তর না দিয়ে চর-থাপ্পড় ও কিল-ঘুঁষি মারা শুরু করেন এবং তাকে না জানিয়ে মিটিং করার পারমিশন কে দিয়েছে।
এ অবস্থায় মহিলা আওয়ামী লীগের অন্য কর্মীরা সলেনুর বেগমকে উদ্বার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসা করান।
মারধরের শিকার সাবেক ইউপি সদস্য সলেনুর বেগম বলেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সাকিনা খাতুন পারুল আপার নির্দেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে উঠান বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরি ও প্রাথমিক কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করি। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গিয়ে ৫১ জনের নামের তালিকা তৈরি করি। এই সব কাজ করার আগে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা খাতুন, ও ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, জামবাড়িয়া, দলদলী ও গোহালবাড়ি ইউনিয়নের কাজ শেষ করেছি। ভোলাহাট সদর ইউনিয়নে কাজ শুরু করেছি কয়েকদিন আগে। গত শনিবার আলালপুর মাদরাসায় উঠান বৈঠক করার সময় সাহাজাদী বিশ্বাস হঠাৎ করেই এসে মারধর শুরু করে তাকে গুরুতর আহত করে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে আহত সলেনুর বেগম জানান তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই সাবেক ইউপি সদস্য।তাঁরা দুজনই দীর্ঘ দিন ধরে দলের একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে সাংগঠনিক কাজ করেন। জেলা নেতৃবৃন্দের নির্দেশে দলের জন্য এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন।
তিনি দলের কাছে এর সুবিচার দাবি করেছেন।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মাদরাসায় ঢুকেই শাহজাদী সলেনুর বেগমকে বেদম চড় থাপ্পড় কিল ঘুশি মেরেছে। বাধা দিতে গেলে তাকেও নানারকম গালিগালাজ করেছেন ঐ নেত্রী । যুব মহিলা লীগে থাকা সত্বেও মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে বাধা এটা অসাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। এরা গায়ের জোরে সব দখলে নিতে চাই। এরা দলে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দল।
ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আলী শাহ বলেন, এটি খুবই খরাপ ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা । আশা করি, এ ঘটনায় জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যস্থা নিবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা দলগত ভাবে, এই মেয়েটি কে সহযোগীতা করে যাচ্ছি। নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে এমন উদ্যাোগ নেয়া জরুরি। অথচ সাহাজাদী নিজেও কাজ করবে না, আবার অন্যাকেও করতেও দিবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল গাফফার মুকুল জানান, সলেনুর বেগম আমাকে আগেই জানায় এই কাজটি সম্পর্কে। এই উপজেলায় মহিলা আওয়ামী লীগের তেমন কোন কার্যক্রম নাই। তাই আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারিনা। তাই আমরা প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে বলি। এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেয়া হয় একাজে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য। অথচ তাকে মারধর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন শাহজাদি নিজেও কাজ করবেনা,অন্য কেউ করলে বাধা দিবে ,এটা স্ববিরোধী এবং সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সাকিনা খাতুন পারুল বলেন, তালিকা করতে গিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আমি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কর্মীদের সকল উপজেলায় ওয়ার্ড ইউনিয়নের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীতে নির্বাচন উপলক্ষে এসব কাজ করতে বলা হয়েছে। মূল সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে এ সব কাজ করতে বলেছি। শাহজাদীকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলেও সে করেনি। বরং আরেক নারী করতে গেলে তাকে মারধর করেছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, কয়েকমাস পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে তালিকা করে কমিটি গঠনের কাজটি ভালো এবং মূল দলের জন্য সহায়ক । আগামী ভোটে এটি কাজে আসবে। ভোটে এর প্রভাব রয়েছে ব্যাপকভাবে। এই কাজ করতে গিয়ে মারধর করা ভীষণ অপরাধ। আমরা চাই সাহাজাদীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হউক।
এবিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাজাদী বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ আগে কমিটি করার নির্দেশনা নেই, তাই কমেটি গঠন করতে বাঁধা দিয়েছি। মারার বিষয় টি তিনি অস্মীকার করেন।
ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এবিষয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷