শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সব শেষ হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে শিশুটি
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৪:৪৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

রাজধানীর মিরপুরে কমার্স কলেজের পাশে বৃষ্টির পর রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় এ পরিবারের শিশু হোসাইন।

মায়ের কোলে থেকে ছিটকেপানিতে পড়ে যাওয়ায় পর তাকে উদ্ধার করে অনিক নামের এক যুবক। পরে হোসাইনের বোন লিমাকে বাঁচাতে গিয়ে অনিকও বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন মিজান (৩০) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫)। সঙ্গে ছিল মেয়ে লিমা (৭) ও ছেলে হোসাইন। হঠাৎ করে তারা রাস্তার পানির মধ্যে পড়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা তারে বিদ্যুতায়িত হয়েই তারা পড়ে যান। তাদের তুলতে এগিয়ে আসেন অনিক নামে এক অটোরিকশাচালক। তিনি প্রথমে শিশু হোসাইনকে পানি থেকে তুলে আনেন। এরপর শিশু লিমাকে তুলতে গিয়ে অনিক নিজেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং রাস্তার পানির মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকেন।

অন্যরা তাদের উদ্ধার করতে করতে যে সময় গেছে ততক্ষণে মিজান, তার স্ত্রী, মেয়ে এবং বাঁচাতে এগিয়ে আসা অনিক ৪ জনই মারা যান।  

স্থানীয়রা বলছেন, অনেকটা অলৌকিকভাবে গতকাল বেঁচে যায় শিশু হোসাইন। তারা বলছেন মায়ের কোলে থেকে ছিটকে একটু দূরে পড়ায় প্রাণে রক্ষা পায় শিশু হোসাইন। 

শনিবার সকালে শিশু হোসাইনকে নিয়ে মিরপুর মডেল থানায় আসেন আমেনা বেগম নামে এক নারী। সেখানে তিনি শিশু হোসাইনের বেঁচে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। 

তিনি বলেন, হোসাইনের মা যখন পানিতে পড়ে যায় তখন হোসাইন মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় অনিক সঙ্গে সঙ্গে এসে হোসাইনকে পানি থেকে তুলে আমার কোলে দেয়। তাকে কারেন্ট ধরে নাই। পরে আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে প্রথমে শরীরে গরম তেল দিই। এরপর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ডাক্তার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। রাতে তাকে সেখানে নিয়ে যাই। চিকিৎসার পর সকালে ডাক্তার বলেন, হোসাইন এখন মোটামুটি সুস্থ, তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। পরে আমি জানতে পারি হোসাইনের দাদা ও নানা মিরপুর মডেল থানায় আছে, সেজন্য আমি এখানে আসি।

আমেনা বেগম বলেন, হোসাইনকে অনিকের মাধ্যমে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। না হলে একই ঘটনায় তার মা-বাবা ও বোন এবং অনিক মারা গেছে, তার তো বাঁচার কথা ছিল না। এখন হোসাইনকে কোলে নেওয়ার বা দেখাশোনার লোক নেই। হোসাইনের নানা ও দাদা তার মা, বাবা ও বোনের মরদেহ নেওয়ার জন্য থানা ও হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাই আমি তাকে আপাতত দেখাশোনা করছি। তাদের কাজ শেষ হলে আমি হোসাইনকে তার নানা ও দাদার কাছে বুঝিয়ে দেব।

মিজানের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিজানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠিতে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। মিরপুর এলাকায় ভাসমান দোকানে শরবত বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গতকাল রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন মিজান। সেখান থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে প্রাণ গেল তাদের। 

মিজানের বাবা নাসির হাওলাদার বলেন, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। মিজান আমার মেজো ছেলে। পরশু সকালে তারা ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় আসে। তাদের এই অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। মাত্র এক দিন আগে ছেলে আমার ঢাকায় এসেছিল বৌ-বাচ্চা নিয়ে। এই দেখা যে শেষ দেখা হবে তা কে ভেবেছিল! 

মিজানের স্ত্রী মুক্তার বাবা মো. মহফিজ বলেন, আমার মেয়ে ও জামাই নাতি-নাতিনকে নিয়ে রাতে বাসা থেকে খেয়ে বের হয়। এই বের হওয়া যে শেষ তা জানলে তাদের কোনো দিন ছাড়তাম না। এই মৃত্যু মানতে পারছি না। আমার নাতিটার কী হবে। মাত্র সাত মাস বয়সে সে মা-বাবাকে হারিয়েছে। তার কী হবে এখন?

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, ঝিলপাড় বস্তিকে কেন্দ্র করে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের রমরমা ব্যবসা চলে আসছে বহুদিন ধরে।  গতকালের ঘটনাটি ঘটে ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তায়। রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অনেক অবৈধ সংযোগ বস্তিতে গেছে। গতকাল বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে একটি অবৈধ সংযোগের লাইন রাস্তায় পড়ে যায়। রাস্তায় যখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তখন আর ওই তারটি দেখা যায়নি। সেই ছিঁড়ে পড়া লাইনেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায় চারজন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণেই ঘটেছে। বস্তিতে অনেক অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রাস্তার এই পার থেকে নেওয়া‌। গতকাল এসব অবৈধ সংযোগ লাইনের মধ্যে থেকে একটি ছিঁড়ে পানিতে পড়ে যায়। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেন প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেয়।  

এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের স্বজনরা আমাদের কাছে একটি অভিযোগ করেছেন অবহেলাজনিত মৃত্যুর বিষয়ে। অভিযোগটি মামলা আকারে দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে এই ৪ মৃত্যুর পেছনে আর কারো কোনো দায় আছে কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]