সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চস্তরের বৈঠকে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য কভারেজ নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে আমাদের সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরকে অনুরোধ করছি।’
ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত, শিশু, মা এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বজায় রাখা এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু-স্বাস্থ্য চক্র মোকাবিলা করা। দ্বিতীয়ত, সবার জন্য স্বাস্থ্য আইডিসহ একটি আন্তঃচালিত, ডেটা-নির্ভর স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেম তৈরিতে দক্ষতা বিনিময় করা।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তৃতীয়ত, আমাদের উপযোগী একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য বিমা স্কিম গঠনে সহায়তা করা, চতুর্থত, দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি স্টার্ট আপসহ স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং পঞ্চমত, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পেটেন্ট প্রকাশ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ট্রিপ (ট্রাফিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন পার্টনারশিপ) বাধ্যবাধকতা মেনে চলা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম ইউএইচসি সমুন্নত করে ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে। আসুন আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে তা সম্ভব করে তুলি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী, অথচ অর্জনযোগ্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যেসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ লভ্যাংশ দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ প্রতি এক লাখ জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৩তে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া প্রতি হাজার জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ২৮এ নেমে এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশু টিকাদানের ওপর আমাদের গুরুত্ব সর্বজনীন কভারেজ অর্জন করেছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমরা এখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাই অ্যালার্টে কাজ করছি। আমরা ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য উন্নত চিকিৎসা চালু করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মান প্রতিষ্ঠা করেছে। মানসিক স্বাস্থ্য ও স্নায়বিক রোগের বিষয়ে বাংলাদেশের নীতি ও পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতিগত সংবেদনশীল পদ্ধতিতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করি। আমরা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য একটি ‘এক স্বাস্থ্য পদ্ধতি’ প্রচার করছি। আমরা পুষ্টি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জনস্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলো শূন্য বা সর্বনিম্ন খরচে পরিষেবা প্রদান করে, যা আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ কভার করে। প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে তাদের সেবার মান উন্নয়নে বাংলাদেশের মনোযোগ রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো খরচ মেটানোর একটি কার্যকর অর্থায়ন মডেল তৈরি করা। বাংলাদেশে আমরা আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করি।’
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। খবর: বাসস